সিরাজুলের বাগানে ঝুলছে থোকায় থোকায় সৌদি খেজুর
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের একটি বাগানে গাছে গাছে ধরেছে থোকা থোকা সৌদি খেজুর। নানা রঙের খেজুরের সেই বাগান দেখতে প্রতিদিনই আসছেন অনেকে। উপজেলার হওয়ালভাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা জি এম সিরাজুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে এই খেজুরবাগান গড়ে তুলেছেন। শ্যামনগর-নওয়াবেঁকি সড়কের পাশে আট বিঘা জমিতে মাছ চাষের পাশাপাশি চাষ করছেন কয়েক ধরনের সৌদি খেজুর। চার বছর আগে রোপণ করা গাছগুলোর মধ্যে নয়টিতে এবার ফল ধরেছে।
সম্প্রতি সিরাজুল ইসলামের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, এক পাশে ইটের পাঁচিল, অন্য পাশে তারের বেড়া। ফটকে লেখা, ‘হাওয়ালভাঙ্গী সৌদি খেজুরবাগান, প্রোপাইটার: জি এম সিরাজুল ইসলাম’। ভেতরে ঢুকতেই সিরাজুলের সঙ্গে দেখা। তিনি নিজেই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন তাঁর বাগান এবং বলছিলেন খেজুর চাষের নানা গল্প।
সিরাজুল ইসলামের জন্ম ১৯৭১ সালে। পেশায় তিনি জুয়েলারি ব্যবসায়ী। তাঁর দোকানের নাম ‘বিসমিল্লাহ জুয়েলার্স’। ২০১১ সালে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে সৌদি খেজুরের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর। সেখানকার খেজুরবাগান দেখে ফিরে এসে শুরু করেন বীজ সংগ্রহ। আত্মীয়দের সহায়তায় বীজ এনে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করেন নিজের বাড়িতে। ধীরে ধীরে সফলতা পান। তিনি বলেন, ‘শ্যামনগরের আবহাওয়া গরম, মাটি লবণাক্ত। আমি বুঝেছিলাম, সৌদি আরবের মতো পরিবেশ এখানেও আংশিক আছে। সেই চিন্তা থেকেই শুরু করি খেজুর চাষ।’
চার বছর আগে এক বিঘা জমিতে ২০টি সৌদি খেজুরগাছ লাগান সিরাজুল। এবার ফল এসেছে নয়টি গাছে। এসব গাছে ৮০ থেকে ১০০ কেজি খেজুর হবে। ছোট একটি খালে মাছ চাষও করেন তিনি। তার পাশেই আরও ২৫০টি খেজুর গাছের চারা রোপণ করেছেন এক বছর আগে।
বাগানের গাছগুলোয় আছে মেডজুল, আজওয়া, মরিয়ম ও আম্বার জাতের খেজুর। কোনোটার রং হলুদ, কোনোটা টকটকে লাল, আবার কোনোটা মেটে। বাগান তৈরি থেকে শুরু করে চারা সংগ্রহ, রোপণ ও পরিচর্যায় খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। আগামী বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে খেজুর বিক্রির আশা করছেন সিরাজুল।
বর্তমানে সিরাজুলের বাগানে খেজুরের প্রায় ৩০০টি ছোট চারা আছে। নিজেই সেগুলোর কলম তৈরি করেন। প্রথমে তিনি চারা তৈরিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে একেকটি চারা ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলেও এখন বিক্রি করেন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। আবার অনেকে বিনা পয়সায়ও পান। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের আফজাল হোসেন ৩০টি চারা কিনলেন ৫০০ টাকা করে। আরেকজন ২১টি চারা কিনতে অগ্রিম বায়না করলেন।
তবে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সৌদি খেজুর চাষ বিষয়ে এখনো পরিষ্কার ধারণা দিতে পারছে না। সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি অফিসে অনেকবার গিয়েছি। তারা দেখে গেছেন, কিন্তু পরামর্শ দিতে পারেননি। আমি নিজেই বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করি।’
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, সৌদি খেজুর চাষ নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি আদর্শ কি না, তা নিশ্চিত না হয়েই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। উত্তরাঞ্চলে এমন চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, টাঙ্গাইলে বড় পরিসরে খেজুর চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেকে। তবে শ্যামনগরে উৎপাদিত খেজুরের স্বাদ ভালো এবং বাজারে তা ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।