দাবিতে অনড় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা, উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষা ভবন বি-এর সামনে
ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। প্রথম সেমিস্টারের একটি কোর্সে পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ভবন বি-এর সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এসব শিক্ষার্থী। কর্মসূচি চলে বেলা একটা পর্যন্ত। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিতে ‘অনড়’ আছেন জানিয়ে নানা স্লোগান দেন। কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক মো. রাশেদ তালুকদার এবং বেলা ১টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষকেরা একাডেমিক কাউন্সিলে নেওয়া সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কথা বলেননি। তাই সেখানে ফলপ্রসূ কোনো সমাধান আসেনি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ওই বিষয়ে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে অনড় আছেন। তাঁদের সেমিস্টারে মোট ৫৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন বলে আন্দোলনরতরা জানিয়েছেন।

এদিকে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদলকে কথা বলার জন্য ডাকেন। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল উপাচার্যের বাসভবনে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। বৈঠক থেকে বেরিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা তাঁদের অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে রাত আটটার দিকে তাঁরা সংবাদকর্মীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়টি তুলে ধরেন।

প্রতিনিধিদলে থাকা শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক রাত সোয়া আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে উপাচার্য দ্বিতীয় সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে প্রথম সেমিস্টারের বাকি থাকা বিষয়টিতে দুই মাসের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এ পরীক্ষার সাত দিনের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলেও উপাচার্য শিক্ষার্থীদের কথা দিয়েছেন।
শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘উপাচার্য স্যারের কথাগুলো আমরা শুনেছি। বুধবার এসব বিষয় অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমাদেরও বেশ কিছু দাবি আছে। সেসবও উপাচার্য স্যারকে আগামীকাল জানাব। এসব দাবি মেনে নেওয়া হলে আগামী সপ্তাহেই আমরা কর্মসূচি স্থগিত করে পুনরায় ক্লাসে ফিরে যাব।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গত ১৬ জুলাই তাঁদের প্রথম সেমিস্টারের গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্র বিষয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। কিন্তু এর আগে তাঁদের এক সহপাঠী গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এ অবস্থায় তাঁর পক্ষে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। যেহেতু ওই সহপাঠী পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, তাই তাঁর অসুস্থতায় মানবিক দিক বিবেচনা করে সহপাঠীদের কেউই ওই দিন পরীক্ষায় বসতে রাজি হননি। বিষয়টি তাঁরা বিভাগীয় প্রধানকে জানান। তখন থেকেই পরীক্ষাটি নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ১৭৩তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় ওই কোর্স তাঁদের ড্রপ হয়ে যাবে এবং পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে তাঁদের এ বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোর্সটিতে পরীক্ষা দিতে হলে শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষার পরও ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে।