‘বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তার করলেই প্রতিমা ভাঙচুরের প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে’

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর বিভিন্ন মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের এলাকা পরিদর্শন করে সম্প্রীতি সমাবেশ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার সিন্দুরপিণ্ডি মন্দিরে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করলেই ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার প্রতিমা ভাঙচুরের প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বালিয়াডাঙ্গীর প্রতিমা ভাঙচুরের এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সিন্দুরপিণ্ডি মন্দিরে সম্প্রীতি সমাবেশে ঐক্য পরিষদের নেতারা এ দাবি করেন।

গত শনিবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের সিন্দুরপিণ্ডি এলাকার আটটি, পাড়িয়া ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার তিনটি ও চাড়োল ইউনিয়নের সাহবাজপুর নাথপাড়া এলাকার একটি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। আজ প্রতিমা ভাঙচুরের এলাকা পরিদর্শন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে সিন্দুরপিণ্ডি মন্দিরে সম্প্রীতি সমাবেশ করেন তাঁরা।

সমাবেশে ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রমেন মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল বর্মণ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী, সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলার অরুণাংশু দত্ত, সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার রায়, ঠাকুরগাঁও জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার গুপ্ত, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

রমেন মন্ডল বলেন, ‘বালিয়াডাঙ্গীর মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয়। এটা রাজনৈতিক ঘটনা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এখানে এসে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা উসকানিমূলক। একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করা। তোমরা (বিএনপি) এখানে এসেছ, আমাকে সান্ত্বনা দাও। এ ঘটনায় জড়িতদের কীভাবে বিচার করতে পারি, সেই কথা বলো। কিন্তু তারা নতুন ঘটনা ঘটানোর উসকানি দিচ্ছে। এ ঘটনার সবকিছুই তারা জানে। আমি মনে করি, প্রশাসন তাদের গ্রেপ্তার করলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।’

গোপাল বর্মণ বলেন, ‘দেশে যখন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন আসে, তখন ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। জানি না আগামী নির্বাচনে কতজন ভাইয়ের রক্ত যাবে, কতজন মা তার ছেলে হারাবেন, কতজন মা-বোন লাঞ্ছিত হবেন। আমরা লক্ষ করেছি যখন ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর আঘাত আসে, যখন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত আসে, তখনই প্রশাসন কেমন যেন নির্বিকার হয়ে যায়। আজ এ ঘটনা ঘটার পাঁচ দিন হয়ে গেল, কিন্তু কোনো সুরাহা হলো না। আমরা চাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে জনগণের সামনে হাজির করা হোক।’

নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে। মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুরের প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন কবে। প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করবে। ২০২২ সালে শান্তিপূর্ণভাবে যে দুর্গোৎসব পালিত হয়েছে, সেটা তো আমাদের প্রশাসনই করেছে। আবার ২০২১ সালে এ প্রশাসনেরই ব্যর্থতা দেখেছি। কাজেই এসব ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেব। সে কারণে আমরা বলেছি প্রশাসনের মধ্যেও সাম্প্রদায়িক শক্তি ও সুযোগসন্ধানী রয়েছে। এমনকি গণতান্ত্রিক দলে (আওয়ামী লীগ) রয়েছে। এ ধরনের শক্তিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনা ঘটানো হয়। নড়াইলের ঘটনায়ও এমন প্রতিবেদন এসেছে।

নিম চন্দ্র ভৌমিক আরও বলেন, ‘আগামীতে নির্বাচন আসছে। এ নির্বাচন ঘিরে আমরা যেমন একদিকে গণতান্ত্রিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী হতে আহ্বান জানাব। পাশাপাশি এই গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে যারা সুযোগসন্ধানী, এদেরও বিচ্ছিন্ন করার দাবি জানাব। গণতান্ত্রিক শক্তির ভেতর যদি সাম্প্রদায়িক শক্তি থেকে থাকে, তাদের কর্মকাণ্ড যদি উদ্‌ঘাটিত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’