খোলা ম্যানহোলে পড়েই কি নিখোঁজ শিশুর মৃত্যু

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ পরিবারের সবার খেয়াল হলো, ছোট্ট জসিমকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। রাত তখন আটটা। সাত বছর বয়সী জসিম স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। একা একা কোথাও চলে যাবে, এমন সম্ভাবনাও কম। দুশ্চিন্তায় পাগলপ্রায় জসিমের বাবা মো. আকবর হোসেন ও নাসিমা বেগম তখনই যেতে চাইছিলেন থানায়। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় আর যাননি। পরদিন সকালে থানায় যাওয়ার আগেই পাশের খালে পাওয়া গেল জসিমের লাশ।

আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের আগ্রাবাদ এলাকার নাসির খাল থেকে পুলিশ জসিমের লাশ উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। জসিমের বাবা মো. আকবর হোসেন পেশায় রিকশাচালক। এমন ঘটনায় তিনি ভেঙে পড়েছেন। কী কারণে ছেলের মৃত্যু, তা জানতে চান তিনি। এলাকাবাসীর ধারণা, খোলা ম্যানহোল দিয়ে জসিম খালে গিয়ে পড়েছে।

খোলা ম্যানহোলে পড়ে চট্টগ্রামে প্রায়ই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তিন বছরে চট্টগ্রাম নগরের নালা ও খালে পড়ে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর নগরের আছদগঞ্জের কলাবাগিচা খালে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর নগরের ডবলমুরিং থানাধীন সিডিএ আবাসিক এলাকার খালে নেমে নিখোঁজ হয় আবদুল্লাহ (৫)। এক দিন পর আবদুল্লাহর মরদেহ পাওয়া যায়। এ ছাড়া গত বছরের ৭ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ফতেহপুর ইসলামি হাটসংলগ্ন বাদামতলা এলাকার নালায় পড়ে মৃত্যু হয় কলেজছাত্রী নিপা পালিতের (২০)।

স্থানীয় মানুষদের ভাষ্য, নাসির খালের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করছে সিডিএ। তবে খালের পাশের রাস্তায় স্ল্যাব দেওয়া হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, রাতে খেলাধুলা করতে গিয়ে সম্ভবত সেই ম্যানহোল দিয়ে সে খালে পড়ে যায়। আজ সকালে তার লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় মানুষেরা পুলিশে জানান।

ওই এলাকার বাসিন্দা রবিউল হোসেন বলেন, এই এলাকায় খালের পাশে যে রাস্তা করা হয়েছে, সেখানে ১০ থেকে ১২টি স্থানে স্ল্যাব নেই। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়েছে। শিশু জসিম এভাবে মারা গেছে কি না, এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।

নগর পুলিশের বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধারের পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে বলা যাবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাবে, নগরে উন্মুক্ত নালা-নর্দমা ও খালে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে ৫ হাজার ৫২৭টি। এর মোট দৈর্ঘ্য ১৯ হাজার ২৩৪ মিটার। সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, পথচারীদের নিরাপদে চলাচলের জন্য গত তিন বছরে প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট স্ল্যাব মেরামত এবং নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ খালের পাড়ে ১৫ হাজার বর্গফুট রক্ষাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে নালা-নর্দমায় কয়েক হাজার মরণফাঁদ রয়েছে।