কুমারখালীতে ১৬ মাসে ৬৭টি বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরি, ধরা পড়ছে না চোর

গত বছরের মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ৬৭টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র কৌশলে ট্রান্সফরমারগুলো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার
ফাইল ছবি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আবার পল্লী বিদ্যুতের পাঁচ কিলোভোল্ট অ্যাম্পিয়ার (কেভিএ) ধারণক্ষমতার একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের নীলের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৪০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এ নিয়ে গত ১৬ মাসে উপজেলায় প্রায় ৬৭টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬৬টি ট্রান্সফরমারই সেচপাম্পের। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা দাবি করেছেন, সব মিলিয়ে তাঁদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।

পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি চুরির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো চোর ধরা পড়েনি। মালামালও উদ্ধার হয়নি। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

কুমারখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৭টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ৫৫টি ৫ কেভিএর, যার মূল্য প্রায় ২২ লাখ টাকা এবং ১০ কেভিএর ১২টি ট্রান্সফরমার, যার মূল্য ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারগুলোর মধ্যে মাত্র একটি আবাসিক এলাকার। বাকি সব কটি কৃষিকাজের সেচপাম্পের। প্রতিটি চুরির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

গত বুধবার সকালে জোতমোড়া গ্রামের নীলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক মো. আমির ফরায়েজির সেচপাম্পের ট্রান্সফরমারটি বিদ্যুতের খুঁটিতে নেই। পাম্পের পাশে কলাবাগানে ট্রান্সফরমারের বাইরের স্টিলের কাঠামো পড়ে আছে। কিন্তু ভেতরে কোনো যন্ত্রাংশ নেই।

এ সময় কৃষক আমির বলেন, সকালে মাঠে এসে তিনি দেখেন, তাঁর সেচপাম্পে বিদ্যুৎ নেই। পরে তিনি দেখেন, তাঁর ট্রান্সফরমারটি বিদ্যুতের খুঁটিতে নেই। পাশের কলাবাগানে ট্রান্সফরমারের বাইরের স্টিলের কাঠামো পড়ে আছে, কিন্তু ভেতরের কয়েল ও তেল নেই।

জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট রাতে যদুবয়রা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মাঠে কৃষক মো. আকরাম হোসেনের সেচপাম্পর ১০ কেভিএর একটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ছয় মাসে দুবার তাঁর ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। একটি ট্রান্সফরমারের দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তাঁর ভাষ্য, চুরির আতঙ্কে রাতে ঘুম হয় না। তিনি নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানান।

যদুবয়রা পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার রাতেও একটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এ নিয়ে তাঁর এলাকায় চলতি বছরে ছয়টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। সব কটি কৃষকদের। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

কুমারখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল কার্যালয়ের কর্মকর্তা (ডিজিএম) মো. আনসার উদ্দিন বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিত ট্রান্সফরমার চুরি করছে। থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। চলতি বছরের ৩৯টিসহ গত ১৬ মাসে ৬৭টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চক্রটি পরিকল্পিতভাবে ফাঁকা ও নির্জন মাঠের সেচপাম্পের ট্রান্সফরমারগুলো চুরি করছে। চক্রটির কাছে পল্লী বিদ্যুৎ ও কৃষক অসহায় হয়ে পড়েছেন।

কুমারখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকল্যাণ বিশ্বাস বলেন, দক্ষ লোক ছাড়া কেউ ট্রান্সফরমার চুরির কাজ করতে পারে না। ট্রান্সফরমার চোরদের ধরতে পুলিশ জোরালোভাবে অভিযান চালাচ্ছে। খুব দ্রুতই চক্রটি গ্রেপ্তার করা হবে। এ কাজে পল্লী বিদ্যুতের কেউ জড়িত আছে কি না, সেটাও তদন্ত করছে পুলিশ।

ইউএনও বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে মাঝেমধ্যে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।