নওগাঁয় পাটের দাম কম, হতাশ চাষি
চলতি বছর পাট চাষে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
গত পাঁচ বছরে নওগাঁ জেলায় পাট চাষ কমেছে ২ হাজার ৯৩৭ হেক্টর।
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁ ধান ও আম উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। একসময় এ জেলায় পাট চাষ হতো ব্যাপক। কিন্তু ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ এ জেলার কৃষকেরা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এ কারণে তাঁরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি বছরে ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৫৬০ হেক্টর। অর্থাৎ এ বছর পাট চাষে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। গত বছর জেলায় পাটের আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় জেলায় পাটের চাষ কমেছে ৮৬০ হেক্টর। পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালে জেলায় পাটের আবাদ হয়েছিল ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর। এই হিসাবে গত পাঁচ বছরে জেলায় পাট চাষ কমেছে ২ হাজার ৯৩৭ হেক্টর।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাট চাষের সময় এবার নানা বিড়ম্বনার শিকার হন চাষিরা। প্রথমত, বীজ বপণের সময় খরা হওয়ায় ঠিকমতো চারা গজায়নি। এতে ব্যাহত হয়েছে পাটের ফলন। এবার প্রতি বিঘা জমিতে হালচাষ ও বীজ বপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশকের খরচ, পানি সেচ, শ্রমিক খরচ, জাগ দেওয়া, আঁশ ছড়ানোসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়েছে ১৫–১৬ হাজার টাকা।
পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।
বিঘাপ্রতি এবার পাটের ফলন হচ্ছে ৮–১০ মণ। মৌসুমের শুরুতে বাজারে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। এতে পাট চাষে খরচের টাকাই তুলতে পারছেন না কৃষকেরা। গত বছর প্রতি মণ পাট সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
গত ২৯ আগস্ট নওগাঁর মান্দা উপজেলার সতিহাট গিয়ে দেখা যায়, হাটটিতে জমজমাট পাটের বাজার বসেছে। মান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও পাশের মহাদেবপুর ও নওগাঁ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক চাষিরা সাইকেল ও ভ্যানে করে পাট বিক্রি করতে এসেছেন। ভালো মানের প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকায় এবং সর্বনিম্ন ১ হাজার ৯০০ টাকায়।
হাটটিতে পাট বিক্রি করতে এসেছেন উপজেলার গণেশপুর গ্রামের আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘৪০ শতক জমিতে পাটের আবাদ করেছিলাম। খরার কারণে এবার পাটের তেমন ভালো হয়নি। গত একই পরিমাণ জমিতে যেখানে ১২ মণ পাট পাছিলাম। এবার সেখানে পাট পাইছি মাত্র ৮ মণ। আবার দামও গতবারের চাইতে কম। ৪০ শতক জমিতে পাট চাষে প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ পড়িছে। ২ হাজার টাকা মণ দরে পাট করে উঠবে ১৬ হাজার টাকা। লাভ তো দূরে থাক খরচই উঠবে না।’
দিলীপ কুমার নামের এক পাট ব্যবসায়ী বলেন, ‘২৫–৩০ বছর থেকে পাটের ব্যবসা করি। এখান থেকে পাট কিনে খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। বড় বড় মোকামে বেচাকেনা না থাকায় পাটের দাম কমে গেছে। মোকামে পাটের চাহিদা না বাড়লে পাটের দাম আর বাড়বে না। গত বছর কেনা অনেক পাট এখনো আমাদের গোডাউনে পড়ে আছে।’
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছর পাটের বীজ বপণের সময় বৃষ্টি কম হয়েছিল। কৃষকেরা সঠিক সময়ে জমিতে বীজ বপণ করতে না পারায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাটের আবাদ কম হয়েছে। খরার কারণে বীজ থেকে ঠিকমতো চারা গজায়নি। এ কারণে এবার পাটের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। কয়েক বছর ধরে অনাবৃষ্টির কারণে পাট জাগ দেওয়ার সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যার কারণেও কৃষকেরা পাট চাষ করতে চান না।
আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘পানির স্বল্পতার জন্য চাষিদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি। পাটের আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের উচ্চ ফলনশীন বীজ দেওয়া হচ্ছে।’