১০ দিনেও সন্ধান মেলেনি অপহৃত ছেলের, চিন্তায় অস্থির মা

বিলাপ করছেন বান্দরবানে অপহৃত সাবেক সেনাসদস্য আনোয়ারুল হকের মা (বামে), স্ত্রী (মাঝে) ও বোন (ডানে)। শুক্রবার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বান্দরবানের রুমায় নির্মাণাধীন বগালেক-কেওক্রাডাং-ধুপপানিছড়া সড়ক থেকে ১০ দিন আগে আনোয়ারুল হক নামের অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সার্জেন্টকে অপহরণ করে কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র শাখা কুকি-চীন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)।

এত দিন পেরিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে উদ্ধার করতে না পারায় উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন স্বজনেরা। ছেলের চিন্তায় অস্থির আনোয়ারুল হকের মা ফাতেহা আক্তার। তাঁর স্ত্রী সানজিদা আক্তারসহ এক ছেলে ও তিন মেয়ে নিরুপায় কান্নায় দিন পার করছেন।

সার্জেন্ট আনোয়ারুল হকের বাসা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়সংলগ্ন এলাকায়। তিনি জেলার করিমগঞ্জের গুণধর ইউনিয়নের ইন্দাচুল্লী গ্রামের মৃত মো. হেকিম ব্যাপারীর ছেলে। তাঁর ছেলে নাঈমুল হক ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। বড় মেয়ে নাসরিন হক বিবাহিত। দ্বিতীয় মেয়ে তাহমীনা হক নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে তাইয়েবা হকের বয়স মাত্র ছয় বছর।

শুক্রবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ এলাকায় আনোয়ারুল হকের বাসায় গিয়ে করুণ দৃশ্যের দেখা মেলে। ছেলের জন্য দুশ্চিন্তা করতে করতে নাওয়া–খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন ৭০ বছর বয়সী মা ফাতেহা আক্তার। একটু পরপর বিলাপ করছেন।

স্বামীর অপহরণের কথা শোনার পর থেকে কাঁদছেন সানজিদা আক্তার। আনোয়ারুল হকের দুই ভাই জাকির হোসেন, নবী হোসেন; দুই বোন হেলেনা, দুলেনাসহ পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। আনোয়ারুল হকের সন্তানেরাও বাবার চিন্তায় বিষণ্ন হয়ে আছেন। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা এসে তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ ১২ মার্চ কথা হয় মা ফাতেহা আক্তারের। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘সরকার যেন আমার বুকের ধনরে আমার কাছে সুস্থভাবে ফিরিয়ে দেয়। শেষ যখন কথা হয়, বাবা বলছিল, “মা, রোজা রেখে আমার জন্য দোয়া করবা। আমি রোজার শেষের দিকে চলে আসব, তোমাদের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ঈদ করব।” বাবার সঙ্গে ১০ দিন ধরে কোনো কথা হয় না, কোনো খোঁজখবরও ‍পাই না। বাবার চিন্তায় চোখে ঘুম নেই। খাবারও পেটে যায় না।’

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ মার্চ বান্দরবানের রুমায় পাসিংপাড়া ও সুংসংপাড়ার মাঝামাঝি এলাকায় নির্মাণাধীন সড়কে ঠিকাদারির কাজ করার সময় আনোয়ারুল হকসহ মোট ছয়জনকে তুলে নিয়ে যান কেএনএ সদস্যরা। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আনোয়ারুল হক ও দুই ট্রাকচালককে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়। এরপর ‘ভা-তে কুকি’ নামের একটি ফেসবুক পেজে আনোয়ারুল হকের ছবি দিয়ে লেখা হয়, ‘কম্বিং অপারেশনে আটক ব্যক্তিদের কারাগার থেকে ছেড়ে না দিলে আনোয়ারুল হককে ছেড়ে দেওয়া হবে না।’

স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে সর্বশেষ আনোয়ারুল হক মুঠোফোনে বলেছিলেন, ‘আমি বিপদে আছি, আমার জন্য মসজিদে দোয়া করাও। আমি যদি ভালো থাকি, তাহলে ফেরত আসব।’

আরও পড়ুন

আনোয়ারুলের বড় ভাই জাকির হোসেন বলেন, তাঁর ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট হিসেবে প্রায় দেড় বছর আগে অবসর নেন। এরপর বান্দরবানে সড়ক নির্মাণের একটি প্রজেক্টে যোগ দেন। সেখানে কাজ করার সময় ১৫ মার্চ অপহরণের শিকার হন।

তাঁর ভাইয়ের মুঠোফোনেও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘ভাইটা আমার কোথায় কেমন আছে, বলতে পারছি না। ১৮ মার্চ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ভাতিজা সৌরভ ওর বাবার মুঠোফোনে কল করলে আধা মিনিট কথা হয়। এ সময় সবার কাছে দোয়া চেয়ে সে জানায়, বান্দরবানে আছে। খুব সমস্যায় আছে। এর পর থেকে মুঠোফোন নম্বর বন্ধ। আমরা এখন দিশাহারা। কোথায় খুঁজব বা কাকে অভিযোগ করব, তা–ও বুঝতেছি না। সরকারের কাছে দাবি, আমার ভাইকে যেন আমাদের মাঝে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।’