মশারি না খাটিয়ে চিকিৎসা

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩৯ জনের মধ্যে ৫ জন নারী ও ৩৪ জন পুরুষ।

মশারি না টানিয়েই ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে ঠাঁই নিতে হয়েছে অনেককে। গত রোববার সকালেছবি: প্রথম আলো

দেশের অন্যান্য জায়গার মতো ফরিদপুরেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে এই হাসপাতালে বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে মশারি না খাটিয়ে। গত রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা গেছে।

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার বালিয়াহাটি এলাকার বাসিন্দা ডেঙ্গু রোগী আলেয়া বেগম (৬০) বলেন, ‘রাইতে মশারি টানাইছিলাম। সকালে নার্সরা বলছে খুলে ফেলতে। তাই খুলে ফেলছি।’

৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে অন্যান্য বছর ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ওয়ার্ড করা হলেও এবার তা করা হয়নি। পুরোনো ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটে পুরুষ ডেঙ্গু রোগী এবং তৃতীয় তলার মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে নারী ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

রোববার এই হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩৯ জন রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। ৪৮ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। এর মধ্যে মাত্র একজনকে মশারি খাটানো অবস্থায় দেখা গেছে। কোনো মশারি হাসপাতাল থেকে সরবরাহও করা হয়নি। ।

হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স তাহমিনা আক্তার বলেন, ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এখানে ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গু রোগীরা। রোগীর জায়গাই দিতে পারছেন না, মশারি দেবেন কীভাবে?

হাসপাতাল সূত্রে জানা জানা যায়, অক্টোবর মাসের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট ৫৬ জন রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে গত শনিবার সবচেয়ে বেশি, সাতজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৯ জনের মধ্যে ৫ জন নারী ও ৩৪ জন পুরুষ। পুরুষদের বেশির ভাগই ঢাকায় বসবাস করেন। ঢাকা থেকেই তাঁদের জ্বরের সূত্রপাত হয়।

ফরিদপুর সদরের ডিক্রিরচর এলাকার তাবলু শেখের ছেলে মিরাজ শেখ (১৭)। সে ঢাকার একটি ছাপাখানায় কাজ করে। মিরাজ বলে, ‘আমার মশারি নাই। হাসপাতাল থেকে কোনো মশারি দেওয়া হয়নি। এমনকি আমাদের মশারি টানাতেও বলেনি।’

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, পুরোনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে মোট শয্যা আছে ৪৪টি। সেখানে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন ৮৭ জন। অন্যান্য রোগীর সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত পাঁচ নারী রোগীর চিকিৎসা চলছে। তাঁরা গত পাঁচ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে এক, দুই ও তিন নম্বর ইউনিটে মোট শয্যা আছে ৬৪টি। সেখানে মোট রোগী ১০১ জন। অন্যান্য রোগীর সঙ্গে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩৪ জন পুরুষ রোগীর চিকিৎসা চলছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এসব রোগী ভর্তি হয়েছেন। এক নম্বর ইউনিটে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৬ জন রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১৪ জনের চিকিৎসা চলছে মেঝেতে রেখে। তৃতীয় তলার দুই ও তিন নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৮ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ জনকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩৯ জনের মধ্যে একমাত্র রাহুল শেখকে (১৮) মশারি খাটিয়ে চিকিৎসা নিতে দেখে গেছে। রাহুলের বাবা বলেন, ‘কাইলকা আইসা শয্যা পাই নাই। মেঝেতে যেখানে আছি, ফ্যান নাই। হাসপাতাল থেকে কিছুই দেয় নাই। এমনকি পাটিটাও নিজেদের কিনতে হইছে।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এনামুল হক বলেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে প্রতিদিন তিন থেকে চারজন রোগী আসছেন। আবার প্রতিদিন সুস্থ হয়ে কেউ কেউ চলেও যাচ্ছেন। অনেকের থাকার প্রয়োজন নেই, তারপরও ভয়ের কারণে থেকে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি সংকটজনক নয়। এখনো আলাদা ইউনিট করার মতো পরিস্থিতি হয়নি। সব রোগীকে মশারি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।