ময়মনসিংহে একই সময়ে দুই শিশু নিখোঁজ, মুক্তিপণ দাবি, পুকুরে মিলল একজনের লাশ
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাশাপাশি গ্রামের দুই প্রবাসীর দুই শিশুসন্তান প্রায় একই সময়ে নিখোঁজ হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে নিখোঁজের পর আজ শনিবার সকালে এক শিশুর লাশ মিলেছে। পরিবারের অভিযোগ, হত্যার পর লাশটি পুকুরে ফেলা হয়েছে। তবে আজ বিকেল চারটা পর্যন্ত অন্য শিশুর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মৃত শিশুটির নাম সিফাত (৯)। সে উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নের চরশাঁখচূড়া গ্রামের সৌদিপ্রবাসী নুরুল ইসলামের ছেলে ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। অন্যদিকে নিখোঁজ আরেক শিশুর নাম সাদাব হোসেন (৫)। সে নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘরিয়া গ্রামে সৌদিপ্রবাসী আল আমিনের ছেলে। তবে মায়ের সঙ্গে গফরগাঁও উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নের দীঘিরপাড় গ্রামে নানাবাড়িতে থাকত সাদাব। সেখান থেকেই নিখোঁজ হয় সে।
পুলিশ ও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, সিফাত ও সাদাবের বাড়ির মধ্যে দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। গ্রাম দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে গফরগাঁও উপজেলার চরশাঁখচূড়া থেকে নিখোঁজ হয় সে। একই সময়ে বাসা থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফেরেনি সাদাব। সাদাবের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গতকাল রাতে পাগলা থানায় জিডি করা হয়।
শিশুদের স্বজনেরা জানান, দুই শিশু নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন স্বজন ও এলাকাবাসী। গতকাল শুক্রবার রাতে সিফাতের বাবা ও মাকে ফোন দেয় দুর্বৃত্তরা। সিফাতকে জীবিত ফিরে পেতে চাইলে প্রথমে ২ ও পরে ১৫ হাজার টাকার মুক্তিপণ দাবি করে তারা। বিষয়টি পুলিশকে জানালে প্রযুক্তির সহায়তায় দেখতে পান একটি ফোন ঢাকার ধামরাই ও অন্যটি ফরিদপুর থেকে করা হয়। পুলিশের ধারণা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া নম্বর দেখেই প্রতারকেরা টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এরই মধ্যে আজ সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরের একটি পরিত্যক্ত পুকুরে সিফাতের মরদেহ ভেসে ওঠে। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সিফাতের মা সাবিনা খাতুন জানান, একই এলাকার আরমান হোসেন নামের এক ছেলে তাঁর মেয়েকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন। গত বুধবার রাতে বাড়িতে গিয়ে তাঁর মেয়েকে হুমকি-ধমকিও দেন আরমান। সাবিনা আহাজারি করে বলেন, ‘আমি তো জানি না, আমার মাসুম বাচ্চার লগে কিডা জিদ করব। আমার ছেরারে মাইরা ফেলছে।’
সিফাতের লাশ উদ্ধারের পর থেকে আরমানকে এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর খোঁজ করা হচ্ছে জানিয়ে পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, শিশুটিকে ঘাড় মটকে হত্যার পর মরদেহটি পুকুরে ফেলা হয়েছে। কারা ও কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে—সে রহস্য উদ্ঘাটনে আমরা কাজ করছি।’
শিশু সিফাতের মরদেহ পুকুরে পাওয়ার খবরে সাদাবের সন্ধানে বাড়ির আশপাশের পুকুরে জাল ফেলে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু তার খোঁজ মেলেনি। পরিবারের দাবি, আজ দুপুর ১২টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে সাদাবের মা সুমি আক্তারকে কল করে জানানো হয়, ‘ছেলে ভালো আছে, টেনশন কইরেন না। ৩০ হাজার টাকা পাঠালে আধা ঘণ্টার মধ্যে ফেরত দিয়া যাব।’
আজ বিকেল পৌনে চারটার দিকে শিশুটির নানা সুলতান মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা গফরগাঁও স্টেশনে সাদাবের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁর নাতিকে ফেরত দেবে বলে বেলা একটার দিকে দুটি নম্বরে মোট ২৮ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে। তবে নম্বর দুটি আপাতত বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
পাশাপাশি দুই গ্রামের দুই শিশু নিখোঁজ হওয়া ঘটনাটিকে রহস্যজনক জানিয়ে চরশাঁখচূড়া গ্রামের বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দ্রুত ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে পাগলা থানার ওসি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, বাড়ির পাশের কোনো পুকুরে হয়তো শিশুটি পড়ে গেছে।’