মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ১৩ বছর নিখোঁজ, দেশে ফিরলেন জগুন বিবি
২০১১ সালে জগুন বিবি নিখোঁজ হন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৫২ বছর। ওই ঘটনায় স্বজনেরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাননি তাঁরা। দীর্ঘদিন পর ফেসবুকের মাধ্যমে স্বজনেরা জানতে পারেন জগুন বিবি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আছেন। ১৩ বছর পর আবার বাড়ি ফিরে এসেছেন তিনি।
জগুন বিবি (৬৫) শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ডেঙ্গর ব্যাপারীকান্দি গ্রামের লালমিয়া ব্যাপারীর স্ত্রী। এই দম্পতির দুই ছেলে ও চার মেয়ে। গত মঙ্গলবার যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন জগুন বিবি। এরপর স্বজনেরা তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জগুন বিবির স্বামী লালমিয়া ব্যাপারী বলেন, স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহর রহমতে তাঁকে আবার খুঁজে পেয়েছেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের দিকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন জগুন বিবি। স্বজনেরা বিভিন্ন সময়ে তাঁকে চিকিৎসা করান। ২০১১ সালের শুরু দিকে তিনি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
গত মার্চ মাসে জাজিরা উপজেলার বাসিন্দা মাসুদ রানার ফেসবুকে জগুন বিবি সম্পর্কে তথ্য দেন ভারতীয় নাগরিক আজিজুল শেখ। তাঁর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার ফেদেরগঞ্জ থানার বিজয়ভাটি গ্রামে। মাসুদ রানা জগুন বিবির বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। তখন স্বজনেরা তাঁর বিষয়ে জানতে পারেন। মাসুদ রানার মাধ্যমে আজিজুল শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জগুন বিবির ছেলে জয়নাল ব্যাপারী। এরপর প্রশাসনের সহায়তায় জগুন বিবির জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও নিখোঁজ হওয়ার সময়ের জিডির কপি দূতাবাসের মাধ্যমে ভারতে পাঠানো হয়।
গতকাল হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আজিজুল শেখের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আট বছর আগে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এক নারীকে (জগুন বিবি) বসে কাঁদতে দেখি। কোথায় বাড়িঘর, কিছুই বলতে পারছিল না। তখন আমার বাড়িতে তাঁকে আশ্রয় দিই। আমাদের পরিবারে তিনি ভালোই ছিলেন। কয়েক মাস আগে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপর আগের স্মৃতি ফিরে আসে। তিনি স্বামী-সন্তানের নাম বলেন। বাড়ি বাংলাদেশে বলে জানান। গত মার্চে তাঁদের এলাকার এক ব্যক্তিকে ফেসবুকের মাধ্যমে তথ্য দিই। তাঁকে পরিবারের কাছে ফেরত দিতে পেরে ভালো লাগছে। আর খারাপ লাগছে ওই বুড়িমাকে (জগুন বিবি) ছেড়ে থাকতে হবে।’
জগুন বিবির ছেলে জয়নাল ব্যাপারী বলেন, ‘আমরা আর কখনো মাকে ফিরে পাব, ভাবতে পারিনি। মা ফিরে আসায় আনন্দ লাগছে। আত্মীয়স্বজন মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। যিনি আমার মাকে আশ্রয় দিয়েছেন, চিকিৎসা করিয়েছেন, তাঁর প্রতি আমরা অনেক কৃতজ্ঞ।’
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জগুন বিবি ভারতে আছেন—এমন তথ্য আমরা গত মার্চে পাই। তথ্য যাচাই করার জন্য দূতাবাস থেকে আমাদের কাছে চিঠি আসে। তখন আমরা প্রয়োজনীয় কগজপত্র পাঠাই। জগুন বিবি ১৩ বছর পর স্বজনদের কাছে ফিরেছেন, এতে আমরাও খুশি। তাঁর যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।’