কমছে পানি, বাড়ছে ভাঙন

এলাকাবাসী ভাঙন থেকে বসতভিটা, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট রক্ষায় বাঁশ ও গাছের ডালের আড় দিয়ে ভেতরে মাটি ফেলে প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন।

সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমিকতে পড়েছে। গত শুক্রবার জামালগঞ্জের গজারিয়ায়
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে প্রধান নদী সুরমাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় বাড়ছে ভাঙন। এতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সড়ক, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাজ চলমান থাকলেও অনেক স্থানেই ভাঙন ঠেকাতে কোনো কাজ হচ্ছে না।

এলাকাবাসী ভাঙনের কবল থেকে বসতভিটা, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট রক্ষায় বাঁশ ও গাছের ডালের আড় দিয়ে ভেতরে মাটি ফেলে প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের পাশে সুরমা নদী ভাঙছে কয়েক বছর ধরে। নদীর পানি টান ধরলে ভাঙন তীব্র হয়। এতে প্রতিবছরই কিছু বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়। আবার অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নেন। নদীভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন গ্রামের নবী হোসেন, ফেরদৌসি বেগম, রহমত আলী, আক্কাছ আলী, আলী আমজদসহ আরও অনেকে।

সুরমাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারিপত্র দিয়েছেন।
মামুন হাওলাদার, নির্বাহী প্রকৌশলী, সুনামগঞ্জ পাউবো

নবী হোসেন বলেন, ‘বছর বছর নদী ভাঙে, আর আমরাও বাড়িঘর সরাই। আর তো যাওয়ার জায়গা নাই। ভাঙন বন্ধ না করলে একসময় গ্রামই থাকত না।’

নদীভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের নয়াহালট, চানপুর, লক্ষ্মীপুর, সংবাদপুরসহ আরও কয়েকটি গ্রাম। নয়াহালট গ্রামের রহমত আলী বলেন, ‘নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারাচ্ছে অনেকে। নদী ভাঙতে ভাঙতে বসতভিটার কাছাকাছি চলে এসেছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ঘরটি রক্ষা করতে পারব না। ঘর গেলে কোথায় থাকব, এ নিয়ে চিন্তায় আছি।’

জামালগঞ্জের গজারিয়া গ্রামের উত্তর পাড়া জামে মসজিদের মোতোয়ালি মো. আসাদ মিয়া জানান, নদী ভাঙতে ভাঙতে মসজিদের দেয়ালের কাছাকাছি চলে এসেছে। গ্রামবাসী মিলে বাঁশের আড় দিয়ে কোনো রকমে আটকে রেখেছেন। দ্রুত উদ্যোগ না নিলে এবারই মসজিদ রক্ষা করা কঠিন হবে। গজারিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, গত কয়েক মাসের ভাঙনে তাঁর ওয়ার্ডের গজারিয়া, রামপুর, জামলাবাজ গ্রামের অনেকের বাড়িঘর এবং চলাচলের রাস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। গ্রাম থেকে নদী অনেক দূরে ছিল।

হঠাৎ এপারে ভাঙন শুরু হয়ে এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এখন এই ওয়ার্ডের ৩টি গ্রামসহ গজারিয়া বাজার হুমকির মুখে রয়েছে। এর সঙ্গে উপজেলার নূরপুর, রাজাপুর বাজার, সাচনা-মোমিনপুর সড়ক, তেলিয়া-শাহপুর সড়ক, রামনগর বাজার, ধর্মপাশা উপজেলার নূরপুর-বাবুপুর এলাকা সুরমা নদীর ভাঙনের হুমকিতে আছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া মধ্যনগর উপজেলার মহেষখলা নদে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঐতিহাসিক শহীদ স্মৃতিসৌধটিও হুমকির মুখে রয়েছে। তাহিরপুরের বৌলাই নদের ভাঙনের কবলে পড়েছে ঘাগড়া ও সোহালা গ্রাম। সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের পৈন্দা গ্রামের কাছে সুরমা নদী ভাঙছে অনেক দিন ধরে।

সুরমা নদীর ভাঙনে দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া, আমবাড়ী, নূরপুর, মান্নারগাঁও ও জালালপুর গ্রাম হুমকিতে রয়েছে। শতবর্ষী আমবাড়ি বাজারের অন্তত অর্ধশত দোকানঘর নদীতে বিলীন হয়েছে গত ১০ বছরে। এই উপজেলার লিয়াকতগঞ্জ এলাকা খাসিয়ামারা নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ছাতকের গোবিন্দগঞ্জের শিবপুর, সৈদেরগাঁও, দিঘলী ও চানপুর গ্রাম রয়েছে বটেরখাল নদের ভাঙনের হুমকিতে।

কুশিয়ারা নদীর ভাঙনের হুমকিতে আছে জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাঘময়না, আশারকান্দি ইউনিয়নের ফেঁচিরবাজার, ভাঙ্গাবাড়ি এবং দিরাই উপজেলার আখিল শাহ্ বাজার, ফয়জুল্লাপুর, প্রতাপপুর, মুসাপুর, গ্রামশাল্লা, টুকচানপুর গ্রাম।

 সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর বিভাগ-১) মো. মামুন হাওলাদার জানান, সুরমাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারিপত্র (ডিও) দিয়েছেন। তারা (পাউবো) সরেজমিনে ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছে।