টিসিবির পণ্য কিনতে ভিড়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা

বেড়ায় টিসিবির পণ্য বিক্রয়কেন্দ্রে মানুষের দীর্ঘ সারি। গতকাল বুধবার দুপুরে বেড়া পৌর এলাকার দত্তকান্দি মহল্লায়ছবি: প্রথম আলো

ডাল, চিনি, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা মানুষ। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দামে পাওয়ায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য পেতে মরিয়া হয়ে ছুটছেন পাবনার বেড়া উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। এই ভিড়ে পণ্য পেতে পাঁচ–ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে এই নিত্যপণ্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকাভুক্ত কার্ডধারী ছাড়া কেউ পাচ্ছেন না। কার্ডধারীর বাইরে অসংখ্য দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে পণ্যের আশায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। এ অবস্থায় টিসিবির কার্ডের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বেড়া উপজেলায় টিসিবির পণ্যের জন্য ২২ হাজার ১০৫টি কার্ড বরাদ্দ রয়েছে। প্রত্যেক কার্ডধারী মাসে একবার করে কম দামে ডাল, চিনি, তেলসহ নিত্যপণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রত্যেক কার্ডধারীকে ৪০৫ টাকার বিনিময়ে দুই কেজি করে ডাল, চিনি ও তেল দেওয়া হচ্ছে। খোলাবাজারে এসব পণ্যের দাম ৭০০ টাকার বেশি। ফলে টিসিবির পণ্য পেতে প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়।

কার্ডধারীর বাইরেও অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে কার্ড না থাকায় শেষ পর্যন্ত তাঁরা খালি হাতে ফিরে যান। ফিরে যাওয়া এসব মানুষের কেউ কেউ পণ্য না পেয়ে কেঁদে ফেলেন।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, কার্ড তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যরা তাঁদের অনুসারী ও পছন্দের লোকদের কার্ড দিয়েছেন। কোনো কোনো পরিবারের একাধিক সদস্যকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টিসিবি এত দিন যে পণ্য বিক্রি করেছে, সেখানে সবার জন্য লাইনে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন শুধু কার্ডধারীদের পণ্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাকি লোকজন লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না।

গতকাল বুধবার বেড়া পৌর এলাকার দত্তকান্দি মহল্লার বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। ওই বিক্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ২৯৬ জন কার্ডধারীর মধ্যে ডাল, চিনি ও তেল বিক্রি করা হয়। এ সময় বেশির ভাগ কার্ডধারীকে পণ্য কিনতে চার থেকে ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়া কার্ডধারীর বাইরেও অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে কার্ড না থাকায় শেষ পর্যন্ত তাঁরা খালি হাতে ফিরে যান। ফিরে যাওয়া এসব মানুষের কেউ কেউ পণ্য না পেয়ে কেঁদে ফেলেন।

দত্তকান্দি মহল্লার সুরত বানু (৬০) ও রঞ্জিতা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পণ্য পাওয়ার আশায় প্রায় চার ঘণ্টা ধরে তাঁরা কখনো লাইনে, কখনো লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু কার্ড না থাকায় তাঁদের পণ্য দেওয়া হয়নি। সুরত বানুর আক্ষেপ—‘কম দামে তেল, চিনি, ডাল পাওয়ার আশায় সকালের থ্যা দাঁড়ায়া আছি। কত অনুনয়-বিনয় করিছি, কিন্তু কার্ড না থাকায় কিছুই দিল না।’

এদিকে কোনো কোনো পরিবারের স্বামী ও স্ত্রীসহ একাধিক সদস্য কার্ড পেয়ে পণ্য নিতে এসেছেন বলে জানা গেছে। এমনকি একই ব্যক্তিকে একাধিক কার্ড দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পণ্য বিক্রির তদারককারী কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী শুধু কার্ডধারীর কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে, এমনকি একজনের নামে একাধিক কার্ড পাওয়া গেছে। তবে এ ক্ষেত্রে তা জানামাত্র পণ্য না দিয়ে অতিরিক্ত কার্ডগুলো জমা নেওয়া হয়েছে। কেবল বৈধ কার্ডধারীর প্রত্যেকে পণ্য পেয়েছেন।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহা. সবুর আলী বলেন, ‘দু-এক জায়গায় অতিরিক্ত কার্ড দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের তদারককারী কর্মকর্তারা কঠোর দৃষ্টি রাখছেন। এতে একই ব্যক্তি বা পরিবার অতিরিক্ত পণ্য কেনার সুযোগ বন্ধ হওয়ায় প্রত্যেক বৈধ কার্ডধারী পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, আপাতত এ উপজেলার জন্য নির্ধারিত ২২ হাজার ১০৫টি কার্ডের বাইরে অতিরিক্ত আর কোনো কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা নেই।