বয়স্ক ভাতা বন্ধের খোঁজ নিতে গিয়ে সুরধ্বনী জানলেন তিনি মৃত

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের সুরধ্বনী রানী করকে মৃত দেখিয়ে বয়স্কভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

সুরধ্বনী রানী কর (৭৮) দীর্ঘদিন ধরে মুঠোফোনের মাধ্যমে (এমএফএস) বয়স্ক ভাতার টাকা পাচ্ছিলেন না। এ নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান-সদস্যের কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা পাননি।

পরে কয়েকজনের পরামর্শে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন। তাঁর জায়গায় আরেকজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। সমাজসেবা কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ঘুরেও এখনো ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা হয়নি সুরধ্বনীর। এ নিয়ে চিন্তিত তিনি।

সুরধ্বনী রানী নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামের মৃত নরেন্দ্র চন্দ্র করের স্ত্রী। স্থানীয় বাসিন্দা, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় ও সুরধ্বনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুরধ্বনীর জন্ম ১৯৪৭ সালে। আট বছর ধরে তিনি বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। ভাতাপ্রক্রিয়া ডিজিটাল হওয়ার পরও তিনি নিয়মিত ভাতা পান। কিন্তু বছর দেড়েক আগে হঠাৎ তাঁর মুঠোফোন নম্বরে ভাতার টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়।

সুরধ্বনী রানী বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে ভারতে ছেলের কাছে বেড়াইতে গেছিলাম। সেখানে দুই মাস থাইক্কা চলে আইছি। তার কিছুদিন পর থাইক্কা আমার মোবাইল নম্বরে আর ভাতা পাই না। কয়েক মাস পর মেম্বারের কাছে গিয়া বিষয়টা জানাইলাম। পরে চেয়ারম্যানকে জানাইসিলাম। তাঁরা বিষয়টি দেখবেন বইল্লা জানান। কিন্তু সমাধান না পাইয়া স্থানীয়দের পরামর্শে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়া খোঁজ নিয়া জানতে পারি, আমারে মৃত দেখাইয়া আমার জায়গায় অন্য একজনকে ভাতাভোগী করা হইছে। জাতীয় পরিচয়পত্র দেইখ্খা অফিসের লোকজন পুনরায় ভাতা দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু কয়েক মাস চইল্লা গেলেও ভাতা আর পাইতাছি না।’

সুরধ্বনী জানান, দুই ছেলে রেখে ২০ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। এক ছেলে ছোটবেলায় হারিয়ে গেছেন। আরেক ছেলে দিনমজুরি করে পরিবার নিয়ে কষ্ট করে চলেন। দুই বছর আগে ভারতে খোঁজ মেলে হারিয়ে যাওয়া ছোট ছেলের। পরে ওই ছেলে এসে তাঁকে ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন বেড়ানোর জন্য। দুই মাস পর দেশে ফিরে এসে দেখেন তাঁকে মৃত দেখিয়ে অন্যজনকে ভাতা দেওয়া হয়েছে। সুরধ্বনী রানী আরও বলেন, ‘বয়সের কারণে আমার শরীরে নানা অসুখ-বিসুখ বাসা বাঁধছে। গরিব মানুষ ভাতার টেহাডা পাইলে ওষুধ কিইন্না অন্তত খাইতে পারতাম।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ওই কার্যালয়ের তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমাজকর্মী শেফালি আক্তার বলেন, ‘সুরধ্বনী রানী করের বিষয়টি আমরা জানি। তাঁকে মৃত দেখিয়ে অন্য একজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির দেওয়া মৃত্যুসনদের ভিত্তিতে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই এটা করা হয়েছে। যেহেতু তিনি জীবিত, তাঁর ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ওই ওয়ার্ডে কোনো ভাতাভোগী মারা গেলে তাঁর স্থলে সুরধ্বনী রানী করকে ভাতাভোগী করা হবে। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ও আগে যে নম্বরে ভাতার টাকা পেতেন, সেগুলো নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।’

সুরধ্বনীকে মৃত দেখানোর বিষয়ে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুর রশিদ জানান, ওই বৃদ্ধা দেড়-দুই মাস ভারতে ছিলেন। সেটা তাঁর জানা ছিল না। মৃত ভাতাভোগী প্রতিস্থাপন করার সময় এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির পরামর্শে তাঁর (সুরধ্বনী রানী কর) স্থলে অন্য একজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। পুনরায় তাঁকে ভাতা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

একই তথ্য জানান ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম। খোঁজখবর না নিয়ে মৃত্যুসনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি মূলত সদস্যরা নিশ্চিত করে সনদ তৈরি করেন। চেয়ারম্যান এতে শুধু প্রতিস্বাক্ষর দেন। এর দায় ইউপি সদস্যের। সুরধ্বনী রানীর ভাতা পাইয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল আহমেদ আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।