ভালুকার মর্নিংসান কলেজ
বোর্ডের ছাড়পত্র ছাড়াই ভর্তি
ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
বোর্ডের ছাড়পত্র ছাড়াই (বিটিসি) ছাড়াই মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মর্নিংসান মডেল কলেজের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই কলেজ কর্তৃপক্ষ দুটি শাখাও চালু করেছে। যার একটি শাখা ঢাকা বোর্ডের অধীনে থাকা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় খোলা হয়েছে।
বিধিবহির্ভূত এমন কাজের জন্য মর্নিংসান মডেল কলেজের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত আবেদন দিয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার দুই কলেজের অধ্যক্ষ।
মর্নিংসান মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে শাখা খোলার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক জামাল উদ্দিন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ভালুকা সদরের মেজরভিটা এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রথমে মর্নিংসান নামের একটি কিন্ডারগার্টেন খোলেন আতাউর রহমান। তিনিই প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরে তিনি সেটিকে মডেল স্কুলে রূপান্তর করেন। ২০১২ সালে কলেজ শাখাও চালু করা হয়। তখন আতাউর রহমান হয়ে যান অধ্যক্ষ। ২০২১ সালে মর্নিংসান মডেল কলেজ থেকে ২৪২ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করে ২১৬ জন, পরের বছর ২৪৪ জনের মধ্যে পাস করে ২২২ জন। চলতি বছরে একজন অনিয়মিতসহ এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন ৮১৬ জন। তাঁরা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ফরম পূরণে অনিয়ম
কলেজের বাণিজ্যে শাখার এক শিক্ষার্থী আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদুল আওয়াল কলেজে পড়তেন। ওই ছাত্র বলেন, টেস্ট পরীক্ষায় দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় তাঁকে ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরে ভালুকার মর্নিংসান কলেজ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করেন।
ঢাকা বোর্ডের অধীনে থাকা আব্দুল আউয়াল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, বোর্ড ট্রান্সফার সার্টিফিকেটে (বিটিসি) ছাড়াই অবৈধভাবে মর্নিংসান কলেজ তাঁর কলেজের ১৭০ শিক্ষার্থীকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। ওই ১৭০ জনসহ মোট ২৫২ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন কার্ড তাঁর কলেজে জমা আছে। এসব অনিয়মের কারণে গত ৬ আগস্ট মর্নিংসান কলেজের বিরুদ্ধে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
আরেক অভিযোগকারী শ্রীপুরের মাওনা পিয়ার আলী কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আবুল খায়ের বলেন, তাঁর কলেজের বিজ্ঞান শাখার এক ছাত্রী টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করেন। পরে ওই শিক্ষার্থী টিসি না নিয়েই ভালুকার মর্নিংসান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। এ রকম আরও কয়েকজন আছেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর কলেজের ৭০০ থেকে ৮০০ মিটারের মধ্যে মর্নিংসান কলেজ মাওনা শাখা খুলেছে। মাইকিং করে শতভাগ পাসের নিশ্চয়তায় দিয়ে তারা প্রচার চালাচ্ছে। তিনি গত ২৭ জুলাই অভিযোগ দিয়েছেন।
অনুমোদনহীন দুটি শাখা
ভালুকা পৌর সদরের মেজরভিটা এলাকায় মর্নিংসান মডেল কলেজের মূল ক্যাম্পাস। উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পূর্ব পাশে খাদিজা প্যালেসে দ্বিতীয় শাখা খোলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ফটকে তালা ঝোলানো। দরজায় সাঁটানো লিফলেটের নম্বরে ফোন দেওয়া হলে মেজরভিটার মূল শাখায় যোগাযোগ করতে বলেন ওই ব্যক্তি।
এছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ফায়ার সার্ভিস–সংলগ্ন প্রশিকা মোড়ে রয়েছে আরেকটি শাখা। এই শাখার ফটকে বিশাল সাইনবোর্ডে লেখা—‘সরাসরি ভালুকা হতে পরিচালিত’ মাওনা শাখা, মর্নিংসান স্কুল অ্যান্ড কলেজ আবাসিক/অনাবাসিক’। শাখার সামনের রাস্তার পূর্বপাশের দোকানি বলেন, তিন–চার মাস আগে এই কলেজ চালু হয়েছে। একজন নারীকে কলেজে ভর্তির লিফলেট বিতরণ করতে দেখেছেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে মর্নিং সান মডেল কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান বলেন, মাওনা শাখাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিটিসি ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।
মর্নিংসান মডেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ও শাখা খোলা নিয়ে ময়মনসিংহের শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, ভালুকার মর্নিংসান মডেল কলেজকে শাখা খোলার কোনো অনুমতি দেয়নি বোর্ড। সাত মাস আগে ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শকের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। ভালুকার এই কলেজ সম্পর্কে নানা ধরনের অনিয়ম সম্পর্কে ইতিমধ্যে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছেন তিনি।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান গাজী হাসান কামাল বলেন, বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালে। আর মর্নিংসান মডেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১২ সালে। ঢাকা বোর্ডের অনুমতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মর্নিংসান মডেল কলেজ। তবে ময়মনসিংহ বোর্ড চালু হওয়ার পর ওই কলেজ কর্তৃপক্ষকে শাখা খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। মাউশি থেকে পাওয়া এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মর্নিংসান কলেজের অধ্যক্ষকে ডাকা হয়েছিল। তাঁর কাছে কিছু ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার পরে তদন্ত কমিটি করা হবে।