ওসমানী মেডিকেলে চোর সন্দেহে নৈশপ্রহরীকে মারধরের অভিযোগ, প্রতিবাদে কর্মবিরতি

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ এনে আজ রোববার দুপুরে বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরাছবি: প্রথম আলো

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ক্যাম্পাসের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে চোর সন্দেহে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি ছাত্রলীগ নেতার। এ ঘটনায় আজ রোববার দুপুরে মেডিকেল কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা বিক্ষোভ করে কর্মবিরতি পালন করেছেন। পরে বেলা দেড়টার দিকে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে তাঁরা কর্মসূচি স্থগিত করেন।

মারধরের অভিযোগ আনা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নাম মোহাম্মদ আলী। তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গতকাল শনিবার রাতে তিনিসহ আরও দুজন রাতের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। মেডিকেল কলেজের অডিটরিয়ামে ৬০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেটি শেষ হয়েছে রাত পৌনে চারটার দিকে। অনুষ্ঠান শেষে অডিটরিয়ামে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বন্ধ করতে যান তিনি। সে সময় চেয়ারে একটি ব্যাগ পেয়েছিলেন। পরে অডিটরিয়াম থেকে বেরিয়ে বাইরে কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে সে ব্যাগ তিনি বুঝিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পর এক ছাত্রী অডিটরিয়ামের মঞ্চে গিয়ে মুঠোফোন হারিয়ে গেছে জানালে তিনিসহ অন্যরা খুঁজতে থাকেন। এ সময় ওই মুঠোফোন নম্বরে কল দেওয়া হলে প্রথমে কল ঢুকলেও পরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন শিক্ষার্থীরা তাঁকে সন্দেহ করে তল্লাশি করলেও মুঠোফোনটি পাননি। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সেখানে গিয়ে তাঁকে মারধর করে হাসপাতালের পুলিশ বক্সে নিয়ে যান। তবে তাঁর কাছে কোনো মুঠোফোন না পাওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মোহাম্মদ আলী বলেন, ওই রাতে ঘরে ফেরার পর তিনি সকালে বিষয়টি চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পরিষদের নেতাদের জানান। পরে তাঁরা একত্র হয়ে দুপুরে কর্মবিরতি পালন করেন।

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ওই কর্মচারীর গায়ে তিনি হাত তোলেননি। শনিবার রাতের অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি ছিলেন। পরে তিনি চলে গিয়েছিলেন। রাতে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁকে কল করে মুঠোফোন চুরির বিষয়টি জানান। তিনি সেখানে গেলে ওই কর্মচারীর সামনেই সাউন্ড স্পিকার সরবরাহকারী দোকানের কর্মচারী প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে চুরির ঘটনার বর্ণনা দেন। এ সময় ওই কর্মচারীকে তিনি বিষয়টি কাউকে না বলার শর্তে মুঠোফোন নিয়ে থাকলে দিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। একপর্যায়ে তিনি না দিলে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

ঘটনাস্থল থেকে ওই কর্মচারীকে নিরাপদে রাখতেই পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলেন দাবি করে সাইফুল ইসলাম বলেন, সকালে তিনি জানতে পারেন ওই কর্মচারী তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগসহ অন্যদের নিয়ে কলেজে গেছেন। নৈশপ্রহরীর অভিযোগগুলো সঠিক নয় বলে তাঁর দাবি।

মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছেন। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, প্রত্যক্ষদর্শীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ওই কর্মচারীকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর কাছে মুঠোফোন পাওয়া যায়নি। অধ্যক্ষ আরও বলেন, এ বিষয়ে সোমবার উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে সমাধানের জন্য বলা হয়েছে। এরপর কর্মচারীরা কাজে ফিরেছেন।