হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবৈধ বালু জব্দ করে বিপাকে প্রশাসন

গতকাল মঙ্গলবার নিলামে বালু বিক্রির দিন ও তারিখ ধার্য করেও প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। স্থগিত করা হয়েছে নিলাম। 

উপজেলা প্রশাসন বলছে, তারা ২ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ করেছে। নিলামে তোলার কথা থাকলেও এক পর্যায়ে তা স্থগিত করতে হয়েছে। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কাচুয়া মৌজার পাকরিয়া মহাল এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু জব্দ করে বিপাকে পড়েছে হবিগঞ্জের প্রশাসন। জব্দ করা এ বালু গতকাল মঙ্গলবার নিলামে বিক্রির দিন ও তারিখ ধার্য করেও প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।

এলাকাবাসীর দাবি, রাজনৈতিক নেতাদের চাপে পরে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। তবে প্রশাসন চাপের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কাচুয়া মৌজার পাকরিয়া মহাল থেকে ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন করে আসছিলেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নাঈম ও চুনারুঘাট পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলামসহ সংগঠনটির বেশ কিছু নেতা-কর্মী। তাঁরা যন্ত্রের সাহায্যে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে স্তূপ করে রাখেন বালুমহাল এলাকায়। এ নিয়ে এলাকাবাসী মৌখিকভাবে চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন।

যে জায়গা থেকে বালুগুলো উত্তোলন করা হয়, সেই স্থান জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেওয়া হয়নি।
মো. রবিন মিয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব আলম ঘটনাস্থলে যান। খবর পেয়ে বালু উত্তোলনকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে মাহবুব আলম উত্তোলন করা বালুগুলো থেকে ২ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ করে তালিকা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি গত শনিবার ইউএনও মো. রবিন মিয়া সীমানা যাচাই করে প্রমাণ পান, ইজারা–বহির্ভূত স্থান থেকে এসব বালু উত্তোলন করা হয়েছে। 

এলাকাবাসী ৮ থেকে ১০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের কথা বললেও প্রশাসন কেন ২ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ করেছে প্রশ্ন করলে চুনারুঘাটের ইউএনও মো. রবিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, যখন বালুগুলো জব্দ করা হয়, তখন উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। কাজেই যাঁরা দাবি করছেন ৮ থেকে ১০ লাখ ঘনফুট বা কোটি টাকার বালু নিজেদের, তাঁদের এ দাবি ঠিক নয়। যতটুকু উত্তোলন করা হয়েছে, সেটুকুই জব্দ করেছেন। 

তবে যাঁদের বিরুদ্ধে বালু উত্তোলনের অভিযোগ, সেই ছাত্রদল নেতা আবু নাঈম ও যুবদল নেতা আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, বালু উত্তোলনের জায়গাটি তাঁরা ইজারা নিয়েছেন।

জব্দ বালু ছাড়িয়ে নিতে চাপ

 এদিকে জব্দ করা বালু ছাড়িয়ে নিতে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। 

গত বৃহস্পতিবার জব্দ করা বালু নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা নিলাম–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। গতকাল মঙ্গলবার নিলামের দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা আবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিলাম স্থগিত করে। 

উপজেলার সাটিয়াজুরি কচুয়া এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, যাঁরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন, তাঁরা নিজেদের ইজারার স্থান থেকে বালু উত্তোলনের দাবি করে এলেও এ দাবি সঠিক নয়। এখন তাঁরা এ বালু নিলামে বিক্রি করতে চাপ দিচ্ছেন প্রশাসনকে।

জানতে চাইলে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (রাজস্ব) নাঈমা খন্দকার বলেন, ‘কোনো চাপে নয়, বালু উত্তোলনকারীরা হাইকোর্টে এ জব্দ করা বালুর নিলাম বন্ধে মামলা করেছেন। যে কারণে আপাতত নিলাম স্থগিত রেখেছেন তাঁরা। আদালতের পরবর্তী নির্দেশ পাওয়ার পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।