শখ থেকে পুরোদস্তুর খামারি

পাখি বিক্রির ১টি প্রতিষ্ঠান আর পাখি উৎপাদনের ২টি খামার মিলিয়ে শাহরিয়ারের কাছে বর্তমানে ৭০ প্রজাতির প্রায় ৭০০ ‘কেস বার্ড’ রয়েছে।

লরিকেট পাখি হাতে নিজের প্রতিষ্ঠানে শাহরিয়ার শিশির। গত বুধবার সিলেট নগরের বড়বাজার গোয়াইটুলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঘরজুড়ে লোহার অসংখ্য খাঁচা। সেখানে নানা রঙের পাখি। কিচিরমিচিরে মুখর ঘর। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এসব পাখি দেখাচ্ছিলেন শাহরিয়ার শিশির (২০)। ২০১১ সালে শখের বশে পাখি পালন শুরু করেছিলেন এই তরুণ। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর খামারি। এখন প্রতি মাসে তিনি কয়েক লাখ টাকার পাখি বিক্রি করেন।

সিলেট নগরের বড়বাজার গোয়াইটুলা এলাকায় নিজের বাসার ভেতরে পাখি বিক্রির প্রতিষ্ঠান শাহরিয়ারের। নাম শাহরিয়ার বার্ডস এভিয়ারি। একই এলাকায় একটি ও ঢাকার মোহাম্মদপুরে পাখি উৎপাদনের আরেকটি খামার আছে তাঁর। দেশের নানা অঞ্চলের শৌখিন পাখি পালনকারীরা প্রধান ক্রেতা শাহরিয়ারের। সাধারণত অনলাইনে তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে পাখি কেনেন ক্রেতারা।

ছোটবেলা থেকে পশুপাখি ভালোবাসেন শাহরিয়ার শিশির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১১ সালে শখের বশে ঘরের বারান্দায় বাজরিগার নামের একটি পাখি কিনে খাঁচায় রেখে পোষা শুরু করেন। এ পাখি থেকে একাধিকবার বাচ্চা উৎপাদনের পর বাণিজ্যিকভাবে পোষা পাখি বেচাকেনায় আগ্রহ জন্মে তাঁর। এর পর থেকেই পাখি সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। ২০১৭ সাল থেকে অনলাইনে পোষা পাখি বাজারজাত শুরু করেন তিনি।

একটি পাখি বিক্রির প্রতিষ্ঠান আর দুটি পাখি উৎপাদনের খামার মিলিয়ে শাহরিয়ারের কাছে বর্তমানে ৭০ প্রজাতির প্রায় ৭০০ ‘কেস বার্ড’ রয়েছে। তিনি বলেন, কেস বার্ডের খাঁচাতেই জন্ম, খাঁচাতেই মৃত্যু। মূলত শৌখিন পাখি পালনকারীরা এসব পাখি সংগ্রহ করে পোষেন। বর্তমানে ম্যাকাও, ইন্ডিয়ান রিংনেক টিয়া, আফ্রিকান গ্রে প্যারোট, আমাজন প্যারোট, লাভ বার্ড, ককাটেইল, কনিউর, লরিকেট, কাকারিকি, রোজেলা, সান কনিউর, টারকুজিন, জাপানিজ বাজরিগার, ইংলিশ বাজরিগার, ফিঞ্চসহ নানা ধরনের পাখি বিক্রি করেন শাহরিয়ার।

গোয়াইটুলা এলাকায় শাহরিয়ার বার্ডস এভিয়ারিতে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট–বড় নানা রঙের অসংখ্য পাখি খাঁচার ভেতরে কিচিরমিচির করছে। কিছু পাখি ক্রেতাদের কাঁধে চড়ে বসছে। পাখির খাবার হিসেবে বিক্রির জন্য দোকানে থরে থরে সাজিয়ে রাখা আছে কুসুম ফুল ও সূর্যমুখী ফুলের বীজ, কাউন, ফলমূল ও শাকসবজি। খামারে কিছু পাখিকে ডিমে তা দিতেও দেখা গেছে।

ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদিত পাখির বাচ্চা সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বড় করে বিক্রি করেন জানিয়ে শাহরিয়ার বলেন, তাঁর দোকান ও খামারের সব পাখিই বিদেশি প্রজাতির। আফ্রিকা, হল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়ে আসা এসব পাখি তিনি আগে দোকান থেকে সংগ্রহ করতেন। এখন দুটি খামারে নিজেই প্রতি মাসে অসংখ্য পাখি ব্রিডিং করছেন তিনি। ভবিষ্যতে খামারের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের বাইরে পাখি রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে শাহরিয়ারের।

সিলেট সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের উদ্যোগে আয়োজিত প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে ২০২২ সালে অংশ নিয়ে প্রথম পুরস্কার পান শাহরিয়ার বার্ডস এভিয়ারি।

শাহরিয়ার বলেন, অসুস্থতার কারণে কিছুদিন পড়াশোনা বন্ধ ছিল তাঁর। এখন উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছেন। সাধারণত প্রতিবছরের আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পাখি বেচাকেনার উৎকৃষ্ট সময়। এ সময় প্রতি মাসে তাঁর গড়ে ছয় লাখ টাকার পাখি বিক্রি হয়। অন্য মাসগুলোয় বিক্রি হয় গড়ে দুই থেকে তিন লাখ টাকার।

পাখির চিকিৎসায় বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন শাহরিয়ার শিশির। তিনি বলেন, সঠিক পরামর্শ ও ওষুধের অভাবে অনেক পাখি মারা যায়। এ ছাড়া দেশে শৌখিন পাখির বাজারও সব সময় স্থিতিশীল থাকে না। তাই পাখি কেনাবেচায় মাঝেমধে৵ সমস্যায় পড়তে হয়।