নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন অভিভাবক বলেন, সাড়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পরে তাঁদের ছেড়ে দিয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। সাতজনকে প্রচুর মারধর করা হয়েছে। তাঁরা ভালোভাবে হাঁটতেও পারছেন না।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা পাহাড়ি এলাকা থেকে নয়জনকে অপহরণ করা হয়। পরে মোহাম্মদ আমির (১১) ও রিফাত উল্লাহ (১২) নামের দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি সাতজন অপহরণকারীদের কাছে জিম্মি ছিলেন। আজ তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার সাত ব্যক্তি হলেন বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন (১৭), ফজল করিম (৩৮), জাবেরুল ইসলাম (৩৫), আরিফ উল্লাহ (২২), মোহাম্মদ রশিদ (২৮), মোহাম্মদ জাফর (৩৮) ও মোহাম্মদ জয়নুল (৪৫)।
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন প্রথম আলোকে বলেন, পুরো এলাকার মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকার সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে আস্তানা গড়ে তুলেছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের অপহরণ করে তারা মুক্তিপণ–বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাসে টেকনাফে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। তাঁরা প্রশাসনের কাছে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অপহৃত সাতজন মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার পর ছাড়া পেয়েছেন বলে এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।
ভুক্তভোগী গিয়াস উদ্দিনের মা রহিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর তাঁদের ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। তিনি তাঁর ছেলের জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান বলেন, লাকড়ি সংগ্রহের কথা বলা হলেও সাতজনের মধ্যে গিয়াস উদ্দিন নামের একজন কলেজছাত্র ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে ওই ছাত্র লাকড়ি সংগ্রহে যাওয়ার কথা নয়। পাহাড়ে এমন ঘটনা আগে ঘটলেও তাঁদের পাহাড়ে যাওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার নয়।
পরিদর্শক মো. নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন, উদ্ধার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে। এমন অপহরণের ঘটনা নিয়ে নানা সন্দেহ আছে। তাঁরা বিষয়টি বের করার চেষ্টা করছেন।
গত ছয় মাসে টেকনাফের পাহাড়কেন্দ্রিক ৪১ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা ২৪ জন। বাকি ১৭ জন রোহিঙ্গা। যেখানে ২২ জন মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার পর ছাড়া পাওয়ার তথ্য দিয়েছিলেন। সর্বশেষ ৩ মার্চ দুই শিশুকে অপহরণ করার পর ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণে ছেড়ে দেওয়া হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের একই এলাকার একটি পাহাড়ের ভেতরে খালে মাছ ধরতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন আটজন। ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর তাঁরা ছাড়া পান।