মালয়েশিয়া থেকে দ্রুত দেশে ফেরার কথা ছিল কবিরের, ফিরবেন তবে কফিনে

মালয়েশিয়ায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত কবির হোসেন (ডানে)। বছর দুই আগে ছেলের সঙ্গে তোলা ছবিসংগৃহীত

সাত বছরের প্রবাসজীবনের ইতি টেনে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলের কাছে ফিরতে আর মাত্র ১৫ দিনের অপেক্ষা ছিল নাটোরের প্রবাসী কবির হোসেনের। সে উদ্দেশ্যে প্রায় সব প্রস্তুতিই শেষ করেছিলেন। কিন্তু প্রিয় মাতৃভূমিতে প্রিয়জনদের কাছে জীবিত ফেরা হলো না তাঁর। মালয়েশিয়ার মাটিতে দুর্বৃত্তদের হামলায় মারা যান কবির।

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কয়রাগ্রামে বাড়ি কবির হোসেনের (৪৫)। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে সাত বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে প্রবাসে দায়িত্ব পালনকালে দুর্বৃত্তদের হামলায় তিনি নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর খবরে পরিবারজুড়ে এখন শুধুই আহাজারি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়ার চামান্ডা উথিরাম এলাকায় একটি কারখানায় নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন কবির। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কারখানার ভেতরে দ্বিতীয় ফটকে দায়িত্ব পালনকালে দুর্বৃত্তদের হামলায় তিনি নিহত হন। এদিন দিবাগত রাত তিনটার দিকে সেই দুঃসংবাদ পৌঁছায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে।

নিহত কবিরের স্ত্রী আমেনা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার স্বামীর কত স্বপ্ন ছিল দেশে ফিরবে। রাত ৯টায়ও আমাকে ফোন করেছিল। তখন আমার বুকে খুব ব্যথা ছিল, তাই বেশিক্ষণ কথা বলতে পারিনি। ও বলেছিল, ব্যথা কমলে ফোন দিতে। আমি পরে কতবার কল দিলাম, আর ধরল না। আমার স্বামীকে যারা মারল, আমি তাদের বিচার চাই।’

বাবার ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছিল কবিরের একমাত্র ছেলে সোহান হোসেন। বাবার মৃত্যুর খবরে তার সব আশা এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোহান বলে, ‘বাবা বলেছিল সামনের মাসেই আসবে। আমরা অনেক আশায় ছিলাম। কিন্তু সব আনন্দ শেষ হয়ে গেল। আমি এই হত্যার বিচার চাই। সরকারের কাছে আমার আকুতি, বাবার লাশটা যেন দ্রুত আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

দুই বছর আগে একবার ছুটিতে দেশে এসেছিলেন কবির। ছুটি কাটিয়ে জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়ায় ফিরে যান। তাঁর মৃত্যুর খবরে বাড়িতে ভিড় করছেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, নিহত প্রবাসীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে বা যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন নিহত ব্যক্তির পরিবারের পাশে থাকবে।