হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যুবককে ‘নির্যাতন’, অভিযুক্ত এসআই প্রত্যাহার
ফয়সাল হোসেন নামের এক যুবককে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে দুই দিন থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানা-পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলামকে থানা থেকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। গত ২৭ জানুয়ারি শরীফুলকে প্রত্যাহার করা হলেও বিষয়টি আজ সোমবার জানা যায়।
নির্যাতনের শিকার ফয়সাল হোসেন (২৫) সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া এলাকার মো. ইস্রাফিলের ছেলে। তিনি চরচান্দিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী। ভুক্তভোগী ফয়সালের স্বজনদের অভিযোগ, গত ২৫ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে সোনাগাজীর চরচান্দিয়া ইউনিয়নের পুরোনো সওদাগরহাট এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে উভয় পক্ষ সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে আবার হট্টগোল শুরু হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসা নিতে আসা ফয়সালকে প্রতিপক্ষের লোকজন মারধরের করার জন্য টানাহেঁচড়া শুরু করেন। এ সময় তাঁর মা হাজেরা খাতুন ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। পরে সোনাগাজী মডেল থানার পুলিশ সদস্যরা এসে হাসপাতাল থেকে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
এ ঘটনায় ফয়সালের মা থানায় মামলা করেন। মামলায় জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক সামছু উদ্দিন (৫০), জসিম উদ্দিন (৪০), মাঈন উদ্দিন (৪৫), কাশেম (৫৫), সুমন (৪৫), রুবেল (৩০), শামীমসহ (৪০) অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়।
ফয়সালের মা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘এসআই শরীফসহ বহিরাগত লোকজন আমার ছেলেকে থানা হেফাজতে রেখে দফায় দফায় বেধড়ক মারধর করেছে। একপর্যায়ে পায়ের নিচে ফেলে আঘাত করেছে। গত ২৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় পুলিশ ফয়সালকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ থেকে নিয়ে গেলেও দুই দিন পর ২৭ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে আহত অবস্থায় আবার জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখান থেকে একটি “মিথ্যা মামলায়” গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমি এ ন্যক্কারজনক ঘটনার বিচার চাই। হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় আমি বাদী হয়ে ফেনী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি।’
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি পুলিশ জরুরি বিভাগে ফয়সালকে নিয়ে আসে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে তীব্র ব্যথা থাকায় ইনজেকশনসহ আরও অন্যান্য ওষুধ দেওয়া হয়েছিল।
সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘থানায় সাধারণ মানুষ যেখানে নিরাপদ থাকার কথা, সেখানে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা জঘন্য। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ফয়সালকে থানায় পুলিশসহ বহিরাগতদের নিয়ে মারধরের ঘটনা জানার পর বিষয়টি পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছি।’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে শরীফুল ইসলামকে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি ইতিমধ্যে জেনেছি। ওই পুলিশ সদস্যের বিষয়টি তদন্তাধীন। প্রশাসনিক কারণে ওই পুলিশ সদস্যকে থানা থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এটি আমাদের তদন্তের একটি প্রক্রিয়া।’