দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল প্রচারপত্র তৈরি করলেন এক প্রার্থী

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর হাতে নিজের প্রচারপত্র তুলে দিচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের ভিপি প্রার্থী। সম্প্রতি তোলাছবি: শেখ সাদিয়া সিদ্দিকার থেকে নেওয়া।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল প্রচারপত্র (লিফলেট) তৈরি করেছেন হল সংসদের এক প্রার্থী। ওই প্রার্থীর নাম শেখ সাদিয়া সিদ্দিকা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি (সহসভাপতি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই পদে তিনি ছাড়াও আরও দুই প্রার্থী রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শামসুন্নাহার হলে চারজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রী রয়েছেন। তাঁদের জন্যই ব্রেইল পদ্ধতিতে নিজের নাম ও ব্যালট নম্বরের লিফলেট করেছেন সাদিয়া। এর মধ্যে একজনের হাতে প্রচারপত্র তুলে দিয়েছেন। বাকি তিন ছাত্রী পূজার ছুটিতে বাড়িতে থাকায় তাঁদের হাতে এখনো প্রচারপত্র পৌঁছে দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে শেখ সাদিয়া সিদ্দিকা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চট্টগ্রামে ব্রেইল প্রচারপত্র ছাপানোর মতো প্রেস পাননি। তাই তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে নিজ উদ্যোগে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল প্রচারপত্র তৈরি করেন। সাদিয়া বলেন, ‘এটি করার মাধ্যমে আমি প্রশাসনকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছি। প্রশাসন যেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।’

উল্লেখ্য, ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে। এ নির্বাচনে  প্রার্থী রয়েছেন ৯০৭ জন। এর মধ্যে চাকসুর ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১৫ জন এবং হল সংসদে ৪৮৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা কীভাবে ভোট দেবেন

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে বর্তমানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৮৬ জন। তবে এ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যালট পেপার ছাপানো হবে কি না, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।

কমিশন জানায়, ভোট দেওয়ার সময় একজন প্রতিনিধি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকতে পারবেন। তাঁরা ওই শিক্ষার্থীকে ব্যালটে থাকা নাম ও নম্বর পড়ে শোনাবেন। পরে শিক্ষার্থীর অনুমতিক্রমে ভোট দেবেন। তবে কমিশনের এ প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন অনেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। তাঁরা বলছেন, ওই প্রতিনিধি নিজের মতাদর্শ অনুযায়ী ভোট দিয়ে দিতে পারেন।

দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল প্রচারপত্র বানালেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের ভিপি প্রার্থী
ছবি: শেখ সাদিয়া সিদ্দিকার থেকে পাওয়া

বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রতিবন্ধী ছাত্রসমাজ’ নামে একটি সংগঠন রয়েছে। তাঁরা প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সমস্যা, সুবিধা ও অধিকার নিয়ে কাজ করেন। জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাদিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহার করে অভ্যস্ত। কিন্তু ব্যালটে যদি তা না থাকে, তাহলে আমাদের ভোটাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। ডাকসু নির্বাচনে ব্রেইল ব্যবহার হয়েছিল, কিন্তু চাকসুতে ব্রেইল ব্যালট হচ্ছে না এটি দুঃখজনক।’

জানতে চাইলে  চাকসুর  প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। নির্বাচনে ব্যালটে ব্রেইল যুক্ত করার চেষ্টা চলছে।’

প্রার্থী হয়েছেন ৮ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী

বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  তাঁদের মধ্যে চাকসুতে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মিজান মিয়া, ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আকাশ দাস এবং স্বতন্ত্র হয়ে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সুরত আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ও ছাত্রফ্রন্ট ( বাসদ) সমর্থিত প্যানেল থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মোহাম্মদ সোহেল রানা এবং ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামের একটি প্যানেল থেকে আইন বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান প্রার্থী হয়েছেন।

অন্যদিকে এ এফ রহমান হল সংসদে যোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদক পদে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শান্ত হোসেন ও নির্বাহী সদস্য পদে মো. নাদিম হোসেন প্রার্থী হয়েছেন। ছাত্রীদের আবাসিক বিজয় ২৪ হল সংসদে ছাত্রী সংস্থা সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাহী সদস্য পদে আয়েশা খাতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।