সুনামগঞ্জে ঝড়–শিলাবৃষ্টিতে ৫০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, আহত শতাধিক

সুনামগঞ্জে গতকাল রোববার রাতে ঝড়ের সঙ্গে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে জেলাজুড়ে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং হাওরের বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে গাছ পড়ে, বসতঘর ধসে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এরপর ঝড় থামলেও রাতভর থেকে থেকে বৃষ্টি হয়। ঝড়–শিলাবৃষ্টিতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমপাগলা ইউনিয়নের পাগলাবাজার, রায়পুর কান্দিগাঁও, মির্জাপুর, নবীনগর গ্রামের ঘরবাড়ি বেশি ক্ষতিক্ষস্ত হয়েছে।

শান্তিগঞ্জের বাসিন্দা শিক্ষক ইয়াকুব শাহরিয়ার জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রচণ্ড ঝড় ও ব্যাপক শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। তিনি তখন উপজেলার পাগলাবাজারে ছিলেন। ঝড়ে বাজারের অনেক দোকানপাট তছনছ হয়ে যায়। আশপাশের গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।  উপজেলার হাওর এলাকাতেও শিলাবৃষ্টি হয়েছে।

ঝড়ে বসতঘর ধসে অন্তত শতাধিক মানুষ আঘাত পেয়েছেন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে কেউই গুরুতর আহত হননি। শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ জানান, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় অনেকেরই থাকার জায়গা নেই। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করা হচ্ছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সব এলাকায় খোঁজ নিচ্ছি। ঝড়ের উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৫০০ শতাধিক ঘরবাড়ি–দোকানপাট আংশিক ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। তালিকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঝড়ের সময় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।’

আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় ঝড়ে একটি অটোরিকশার ওপর গাছ ভেঙে পড়ে। এতে ওই অটোরিকশার তিনজন যাত্রী আহত হন। কালীবাড়ি এলাকায় বাসিন্দা রাজু আহমেদ জানান, গাছ ভেঙে অটোরিকশায় পড়ে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে তাঁরা হাসপাতালে পাঠান। ঝড় থামার পর এলাকার লোকজন সড়ক থেকে গাছটি সরিয়ে নেন।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক নিরুপম রায় চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঝড়ের সময় আঘাত পেয়ে সাদ্দাম হোসেন নামের একজন হাসপাতালে এসেছিলেন। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা হাসান আহমদ জানান, তাঁদের উপজেলাতেও ব্যাপক ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ে সড়কের ওপর গাছ পড়ে। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছিল। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাওরে ধানের অবস্থা ভালো। আমরা সব হাওরেই খোঁজ রাখছি। গতকাল রাতে হাওর এলাকায় শিলাবৃষ্টি কম হয়েছে। এ কারণে ফসলের ক্ষতি কম হয়েছে।’

আজ সোমবার সকালে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন।