ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সবার আকাঙ্ক্ষা: সিপিবি সভাপতি

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের চেরাগি পাহাড় এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারেছবি: প্রথম আলো

কেবল বিএনপি নয়, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেশের সবারই দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘এটা কোনো বিএনপির একার ইচ্ছা না। আমরা বলেছি, বহু আগে। ঢাকায় সমাবেশ করে নির্বাচন চেয়েছি। বিএনপির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন কেন? এটা জাতির আকাঙ্ক্ষা। এ দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা। এ দেশের নতুন প্রজন্ম ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারে নাই। সবার আকাঙ্ক্ষা। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্বাচনের বিকল্প আর কিছুই নাই।’

আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের চেরাগি পাহাড় এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিপিবি নেতা শাহ আলম। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়া, মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য করিডরের বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি তুলে সিপিবি নেতা শাহ আলম বলেন, ‘সেটা অক্টোবর বা নভেম্বরে হতে পারে, কিন্তু ডিসেম্বরের বাইরে না। ডিসেম্বরের মধ্যে সেই নির্বাচন আপনাকে দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক আমরা চাই না। জনগণের ভোটে যাকেই আনুক, একটা গণতান্ত্রিক স্পেস মানুষ চাচ্ছে। মানুষের দম বন্ধ হয়ে গেছে।’

নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে মন্তব্য করেন শাহ আলম। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও জাতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন করবেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। ষড়যন্ত্রকারীরা হাত ঢোকানোর সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলত নির্বাচন চান, নাকি উন্নয়ন চান? আর আপনি বলছেন, নির্বাচন না সংস্কার, না বিচার? এগুলো একসঙ্গে চলতে পারে। সংস্কারের কোনো শেষ নাই।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে সিপিবি সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘ইতিমধ্যে আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আপনার আওতায় প্রথমে নাগরিক কমিটি, তারপর জাতীয় নাগরিক পার্টি হয়। তাদের জন্য আপনার দরজা খোলা। অন্যরা সাক্ষাতের জন্য চার দিন অপেক্ষা করে পায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ নিয়ে তো আপনি বিতর্কের মধ্যে পড়ে গেছেন। মানুষের মধ্যে এখন আওয়াজ উঠেছে। ধারণা সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর স্বনামধন্য ব্যক্তি মুহাম্মদ ইউনূসের নিরপেক্ষতা নিয়ে। তাঁর আওতায় নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না, এই প্রশ্নও উঠেছে।’

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন শাহ আলম। দেশকে একটা যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে এখন জান্তা সরকার রয়েছে। আপনারা করিডর দিতে চাচ্ছেন। সমালোচনা হওয়ার পর বলছেন, ত্রাণ চ্যানেল দিতে চাচ্ছেন। ওখানে ভারত ও চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। তারা দিচ্ছে না, আমরা কেন দেব। এতে করে আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য উত্তম চৌধুরী, মোহাম্মদ মছিউদৌলা, ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।