শিক্ষক সমিতির কর্মসূচির মধ্যেই ‘প্রশাসন–ঘনিষ্ঠদের’ পাল্টা মানববন্ধন

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান চলছে শিক্ষক সমিতির। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনেছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার ও সহ–উপাচার্য বেনু কুমার দের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষক সমিতি। এ অবস্থান কর্মসূচির মধ্যেই পাল্টা মানববন্ধন ও বিবৃতি দিয়েছেন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শিক্ষকেরা।  

আজ দুপুর ১২টায় শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে এ মানববন্ধন হয়। ‘সাধারণ শিক্ষকবৃন্দের’ ব্যানারে হওয়া এ মানববন্ধনে অর্ধশতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। তাঁদের অনেকেই প্রশাসনের বিভিন্ন পদে আছেন। পাশাপাশি শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের ১১ সদস্যর দুজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হলে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন।

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সমালোচনা করে দর্শন বিভাগের শিক্ষক এফ এম এনায়েত হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে শিক্ষক সমিতি বা শিক্ষকদের একাংশ। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন সুষ্ঠুভাবে সবকিছুতেই এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে শিক্ষক সমিতির প্রশাসনের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার চালানো অধ্যাদেশ পরিপন্থী কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কোনো অন্যায় কিংবা আইন লঙ্ঘনের মতো কাজ করেনি।’

শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ ফরিদুল আলম বলেন, শিক্ষক সমিতি যে ২৬টি দাবি দিয়েছিল, সেটি নিয়ে তাঁরা সাধারণ সভায় আলোচনা করেননি। কার্যনির্বাহী পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাঁরা এসব কাজ করছেন। যৌক্তিক কোনো দাবি তাঁরা শোনেন না। কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থের জন্য শিক্ষক সমিতির বর্তমান পর্ষদকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

আইন বিভাগের শিক্ষক মুহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগকে কলুষিত করে আইন অনুযায়ী হওয়া নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে শিক্ষক সমিতি।’

সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ সজীব কুমারের ঘোষের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন আইন অনুষদের ডিন আবদুল্লাহ আল ফারুক,  নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাহমান নাসির উদ্দিন, শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য রকিবা নবী প্রমুখ।

এদিকে আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষক সমিতি অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ করে বিবৃতি দিয়েছেন ওই বিভাগের ১১ শিক্ষক। তাঁরা শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে দেওয়ার চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানান।

অবস্থান কর্মসূচির বিরোধিতা

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে শিক্ষক সমিতির অবস্থানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত শিক্ষকেরা। সমিতির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বরাবর দেওয়া চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৭ শিক্ষকের সম্মতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচির মধ্যেই পাল্টা মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে 'প্রশাসনপন্থী' হিসেবে পরিচিত শিক্ষকেরা। আজ দুপুরে শহীদ মিনারের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

চিঠিতে ওই  শিক্ষকেরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দায়িত্ব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সহযোগিতা করা। উপাচার্যের বিরোধিতার নামে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে উসকে দেওয়া নয়। আইন ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বিধিবিধান অনুযায়ীই হয়েছে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের দোহাই দিয়ে একটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা চলাকালে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও ও অশোভন আচরণ করা দুঃখজনক। তাঁরা এসবের তীব্র নিন্দা ও বিরোধিতা করছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, চিঠিতে দেওয়া নামের মধ্যে অনেকেই স্বাক্ষর করেননি। আবার অনেককে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাক্ষর করা শিক্ষকের বেশির ভাগই বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে আছেন, কিংবা প্রশাসনের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পান; কিন্তু সাধারণ শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আছেন।