পাবনা-রাজশাহী মহাসড়ক
মরা গাছের সঙ্গে কাটা হচ্ছে তাজা গাছ
দরপত্রের কার্যাদেশে পাবনা সদরের গাছপাড়া থেকে ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি পর্যন্ত ৭১টি মৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছের কথা উল্লেখ রয়েছে।
পাবনা-রাজশাহী মহাসড়কের দুই পাশ থেকে মরা গাছের সঙ্গে ঠিকাদার তাজা গাছ কেটে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিলামের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করেছে। নিলামের কার্যাদেশে মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটার কথা উল্লেখ রয়েছে।
অন্যদিকে নিলামের কার্যাদেশ অনুযায়ী যে দামে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে, সেগুলোর দাম কয়েক গুণ বেশি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নিলামের কার্যাদেশ থেকে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিলামের মাধ্যমে গাছা কাটার এই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশে পাবনা সদর উপজেলার গাছপাড়া থেকে ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি পর্যন্ত ৭১টি মৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছের কথা উল্লেখ রয়েছে। কার্যাদেশটি পেয়েছে দিনাজপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাগর ট্রেডার্স। ৭১টি গাছের মূল্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ২৫০ টাকা। প্রতিটি গাছের গড় মূল্য হয়েছে ৩ হাজার ১৪৪ টাকা।
এ সম্পর্কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাগর ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বলেন, নিলামকৃত প্রতিটি গাছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নম্বর দেওয়া আছে। নিয়ম মেনে গাছ কাটা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম করা হয়নি।
গত শুক্র ও গতকাল শনিবার মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশ দিয়ে সারি সারি কড়ই গাছ। বড় বড় গাছগুলো সড়কে ছায়া ফেলেছে। গাছপাড়া মোড়, দাশুড়িয়াসহ কয়েকটি স্থানে গাছ কাটা হচ্ছে। মরা গাছের সঙ্গে তাজা গাছ কেটে গাড়িতে তুলছেন শ্রমিকেরা। কিছু স্থানে গাছ কাটার পর গোড়া তুলে ফেলা হয়েছে। মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে খোঁড়ার জায়গা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাত-আট দিন ধরে গাছ কাটার কাজ চলছে। মরা গাছের সঙ্গে প্রতিদিনই তাজা গাছ কাটা হচ্ছে। বড় বড় কড়ইগাছ কেটে দ্রুত তা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। গাছগুলোর মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে, সেগুলোর দাম ২০-৩০ হাজার টাকা করে। কিছু গাছ ৫০ হাজার টাকা দামেরও ছিল। বড় গাছগুলো আগেই কেটে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
গাছপাড়া মোড়ের মুদি ব্যবসায়ী আবদুল সালাম বলেন, মহাসড়কের গাছগুলো অনেক বছরের পুরোনো। অনেক দামি গাছে পরিণত হয়েছে। গাছগুলো কম দামে বিক্রি হওয়ার কথা শুনে তাঁরা বেশ অবাকই হয়েছেন।
দাশুড়িয়ার কালিকাপুর গ্রামের আবদুল খালেক বলেন, ‘এভাবে চোখের সামনে তাজা গাছ কাটার ঘটনা দুঃখজনক। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব যাঁদের ওপর ছিল, তাঁদের অবহেলা অথবা যোগসাজশে এমনটি হচ্ছে।’
দাশুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান সরদার বকুল হোসেন বলেন, ‘আমি গিয়ে দেখেছি মরা গাছের সঙ্গে অনেক তাজা গাছ কাটা হচ্ছে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে লিখিত অভিযোগ দেব। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগ পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, নিলামের কার্যাদেশে শুকনা ও মরা গাছ কাটার নির্দেশ আছে। মরা গাছের সঙ্গে তাজা গাছ কাটা হলে সেটি অন্যায়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। কার্যাদেশের শর্ত না মানলে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।