ফরিদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি
সচেতনতা ও মশকনিধন কার্যক্রম নেই
ফরিদপুরের ইউনিয়ন পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেই। এ কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
ফরিদপুরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী। প্রতি মাসে আগের মাসের চেয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা শহর থেকে ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথাযথভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও এডিস মশার লার্ভা নিধনের উদ্যোগ না নেওয়ায় গ্রামে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এখানে ডেঙ্গু জ্বরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে গ্রামের রোগীই বেশি।
স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলা শহর, উপজেলা শহর ও পৌর এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রচারণা ও মশকনিধনে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় এসব কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এমনকি গ্রামের মানুষ জানেন না ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ কারণে গ্রামে এখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা জানেন দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আছেন। কিন্তু ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণা নেই।
গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা চত্বরে ডেঙ্গু সচেতনতামূলক কোনো বিলবোর্ড কিংবা ব্যানার নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনের পাশে ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে এগিয়ে আসুন’ আহ্বানসংবলিত একটি বিলবোর্ড আছে।
* ফরিদপুরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ও এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। * চলতি মাসের ২২ দিন ৫ হাজার ১০৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। * জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ১৩৮ জন। * সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ১৯৭ জন। * চলতি বছর মৃত রোগীর সংখ্যা ৪৪ জন।
চরভদ্রাসন উপজেলা সদরে একটি চায়ের দোকানে কথা হয় সদর ইউনিয়নের এমপিডাঙ্গী গ্রামের ইয়াছিন মোল্লার (৪৩) সঙ্গে। দুই মেয়ে, এক ছেলে, স্ত্রীসহ তাঁর পরিবারের সদস্য পাঁচজন। তিনি জানান, তাঁর পরিবারের তিন সদস্য ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখন সুস্থ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে উপজেলা সদরে একদিন তিনি মাইকিং শুনেছেন। উপজেলা সদরে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোসহ কোনো কাজ, কোনো প্রচারণা তাঁর চোখে পড়েনি। ডেঙ্গু বিষয়ে তিনি যা জেনেছেন, তা টেলিভিশন থেকে।
ভাঙ্গা মহিলা কলেজের প্রভাষক অজয় দাস জানান, ভাঙ্গা উপজেলায় ডেঙ্গু বিষয়ে মাইকিং তিনি শুনেছেন। কিন্তু পৌর এলাকায় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে তিনি দেখেননি। ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতামূলক কোনো কার্যক্রম চালাতেও তিনি দেখেননি।
নগরকান্দার চর যশোরদী ইউনিয়নে বাস্তুপুটি গ্রামের লক্ষণ চন্দ্র মণ্ডল (২৭) বলেন, তাঁর গ্রামে ঘরে ঘরে ঘরে জ্বর। অনেকের ডেঙ্গু হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে এলাকায় কোনো প্রচারণা নেই। মশকনিধনে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার অভিযান নেই।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরে জুলাই থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। জানুয়ারি থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ১ হাজার ১৮৭ জন। আগস্ট মাসে আক্রান্ত হন ৩ হাজার ৪৫৮ জন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২২ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ১০৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আগস্টে মারা গেছেন ১০ জন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ফরিদপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে নারীসহ আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৪৪ জনে। এই সময় আক্রান্ত হয়ে আরও ৩০৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত জানুয়ারি থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ১৩৮। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ১৯৭ জন।
উপজেলা ও গ্রামপর্যায়ে ডেঙ্গু সচেতনতামূলক কার্যক্রম একেবারে নেই, তা মানতে নারাজ ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে সব উপজেলার পৌরসভা না থাকার জন্য মশকনিধনের কার্যক্রম তেমন চলছে বলে মনে হয় না।