আদালত চত্বরে রাজশাহীর বিএনপি নেতা সাইদকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ

রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আবু সাইদ আদালতে অবস্থানকালে আদালতের মূল ফটকে পাহারা বসায় পুলিশ। আজ রোববার মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

মাগুরায় জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আবু সাইদ ওরফে চাঁদকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের ধস্তাধস্তিতে পুলিশের এক সদস্য ও যুবলীগের এক কর্মীসহ অন্তত দুজন আহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকিসহ তাঁর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির ওই নেতার বিরুদ্ধে মাগুরা আদালতে গত ২৪ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান। ওই মামলায় হাজিরা দিতে আজ রোববার সকালে মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে আসেন মোহাম্মদ আবু সাইদ ওরফে চাঁদ।

প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে চত্বরে আনা হয় ওই বিএনপি নেতাকে। তার আগে থেকেই আদালত চত্বরে জড়ো হন ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আবু সাইদ ওরফে চাঁদকে যখন পুলিশ পাহারায় প্রিজন ভ্যান থেকে নামানো হয় তখন ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের মধ্যে থেকে কেউ একজন বিএনপির ওই নেতার উদ্দেশ্যে জুতা ছুড়ে মারেন। এ সময় পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের ধাওয়া দিলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এতে আদালত পুলিশের এটিএসআই মো. মফিজ হোসেন ও মো. পাভেল নামের এক ব্যক্তি আহত হন। তাঁদের মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত মো. পাভেলের বাড়ি পৌরসভার পারনান্দুয়ালী গ্রামে। সে পৌর যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অমর প্রসাদ বিশ্বাস প্রথম আলোকে জানান, সকাল ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে ওই পুলিশ সদস্য ও এক ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। পুলিশ সদস্যের নাকে আর ওই যুবকের চোয়ালে আঘাত লেগেছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ ওই বিএনপি নেতাকে মাগুরা জেলা যুবলীগের আহ্বায়কের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। মাগুরা সদর আমলী আদালতে ওই নেতার শুনানি হয়। সেখানে মামালার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামির সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাঁর জামিন আবেদন করেন। আদালত উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে পুলিশের কড়া পাহারায় প্রিজন ভ্যানে ওই বিএনপি নেতাকে মাগুরা জেলা কারাগারে নেওয়া হয়। আগামীকাল সোমবার এই মামলায় আসামির রিমান্ড ও জামিন শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আবু সাইদ আদালতে অবস্থানকালে আদালতের মূল ফটকে পাহারা বসায় পুলিশ। আজ রোববার মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

আসামি পক্ষের আইনজীবী জেলা যুবদলের সভাপতি ওয়াসিকুর রহমান কল্লোল প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির ওই নেতা আদালত চত্বরে আসার পর ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ ঠেকাতে গেলে তাঁদের ওপরও হামলা হয়। এতে অন্তত একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আদালত চত্বরে রক্ত পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

জানতে চাইলে মামলার বাদী জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করা ওই বিএনপি নেতাকে ঘৃণা প্রদর্শন করা হয়। একটা পর্যায়ে তাঁকে জুতাও ছুড়ে মারা হয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে পৌর যুবলীগের এক নেতা আহত হয়েছেন। তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছে। চিকিৎসক সিটি স্ক্যান করতে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই আসামিকে লক্ষ্য করে লোকজন জুতা প্রদর্শন করে। এ সময় উত্তেজনার অবস্থা সৃষ্টি হয়। ওই সময় পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিয়ে আসামিকে আদালতে ভেতরে নিয়ে যায়। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ তাঁদের (বিক্ষুব্ধরা) সরিয়ে দেয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে পুলিশের এক সদস্য আহত হয়। তবে সেখানে হামলা বা আটকের ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে কোনো মামলাও হয়নি।

মামলার এজাহারে বাদীর অভিযোগ, ১৯ মে বিকেলে রাজশাহী জেলা ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির উদ্যোগে স্থানীয় শিবপুর বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রকাশ্যে উসকানিমূলক ও মানহানিকর বক্তব্য দেন। আসামি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘আর ২৭ দফা ১০ দফার মধ্যে আমরা নেই, এখন এক দফা; তা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে।’

মামলা থেকে আরও জানা যায়, বাদী ও সাক্ষীরা ওই দিনই সন্ধ্যায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই বক্তব্য প্রচার হতে দেখে মর্মাহত হন। এ ছাড়া এ ধরনের বক্তব্যে মাগুরা জেলার অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীর অপমানবোধ করছেন। আসামির এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিপন্থী কাজ।

মামলায় মোট সাতজনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ হোসেন, আবু বক্কর, মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ খান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের এপিপি হারুনর রশিদ।