পরিবারের ধারণা, সীমানাখুঁটিসহ গ্রেপ্তার পাঁচ ব্যক্তি তিন খুনের সঙ্গে জড়িত  

সংবাদ সম্মেলনে তিন খুন মামলার বাদী কহিনুর খানম ও তাঁর স্বজনেরা
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার কয়রা উপজেলার বামিয়া গ্রামে তিন খুনের ঘটনার সঙ্গে সম্প্রতি সীমানাখুঁটিসহ গ্রেপ্তার পাঁচ ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা করছে ভুক্তভোগী পরিবার। রোববার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ ধারণার কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিন খুন মামলার বাদী কহিনুর খানম লিখিত বক্তব্যে বলেন, তাঁর ছেলে হাবিবুল্লাহ গাজী (৩০), পুত্রবধূ বিউটি বেগম (২৬) ও নাতনি হাবিবা সুলতানা (১২) বামিয়া এলাকায় বসবাস করতেন। গত বছরের ২৬ অক্টোবর সকালে তাঁদের লাশ পাওয়া যায় বাড়ির পাশের একটি পুকুরে। তিনজনের শরীরে ছিল আঘাতের চিহ্ন। ঘটনার পর তাঁরা জানতে পেরেছেন হাবিবুল্লাহ সীমানাখুঁটি ও তক্ষক (গিরগিটি প্রজাতির প্রাণী) কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সময় অচেনা মানুষ হাবিবুল্লাহর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন।

কহিনুর খানম বলেন, গত ২৭ জুলাই পাইকগাছায় সীমানাখুঁটি, তক্ষক ও দামি ব্যক্তিগত গাড়িসহ গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের মধ্যে দুজন তাঁর ছেলের বাড়িতে বিভিন্ন সময় এসেছেন বলে এলাকাবাসীর অনেকেই দেখেছেন। তিনি ধারণা করছেন, পাইকগাছায় উদ্ধার হওয়া সীমানাখুঁটিকে কেন্দ্র করে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। ওই পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁর ছেলেসহ তিন খুনের ব্যাপারে তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে কহিনুর খানম বলেন, মামলায় নিরীহ কয়েকজন গ্রামবাসীকে জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ দাবি করছে, আলাদা আলাদা ঘটনায় ক্ষিপ্ত গ্রামের ১৪-১৫ জন মানুষ একত্র হয়ে হাবিবুল্লাহর বাড়িতে যান, ছেলের স্ত্রী ও নাতনিকে ধর্ষণের পর কুপিয়ে হত্যা করেন। কিন্তু ময়নাতদন্তে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। পুলিশ তাঁদের বক্তব্য যৌক্তিক প্রমাণ করতে জোর করে কয়েকজনকে দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিয়েছে। তাঁরা এখন ওই জবানবন্দি বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন, পুলিশ যেনতেন তদন্তের নামে দিন পার করছে। গ্রামের নিরীহ মানুষকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে, তাঁদের পরিবার-পরিজন অসহায় হয়ে পড়েছে।

কহিনুর খানম বলেন, ‘আমরা দায়সারা গোছের তদন্ত চাই না। আমরা চাই প্রকৃত দোষীদের শাস্তি। এ জন্য তদন্তের স্বার্থে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অথবা সিআইডির কাছে হস্তান্তর করতে হবে। ওই ঘটনায় যেন নিরীহ গ্রামবাসী হয়রানির শিকার না হয়, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে পুলিশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এ সময় পুলিশকে না জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের ব্যাপারটি জানানো কতটুকু যৌক্তিক, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। পুলিশের পক্ষ থেকে সব সময়ই তাঁদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। কোনো তথ্য থাকলে সেটি আগে পুলিশকে জানাতে হবে। তারপর পুলিশ সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।

গত বছরের ২৬ অক্টোবর সকালে কয়রা উপজেলার বামিয়া গ্রামের একটি পুকুর থেকে হাবিবুল্লাহ গাজী, তাঁর স্ত্রী বিউটি খাতুন ও তাঁদের মেয়ে হাবিবা খাতুনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে বিউটি খাতুনের গলায় দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করার চিহ্ন ছিল। হাবিবা খাতুনের ছিল কপালে ও মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। আর হাবিবুল্লাহ গাজীর ছিল হাত-পা বাঁধা এবং মুখে ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। পুকুরের মধ্যে রক্তমাখা কাঁথা-বালিশ পাওয়া যায়। আর বাড়ির পাশের এক নালায় পাওয়া যায় রক্তমাখা কাপড়চোপড়।

ওই ঘটনায় নিহত হাবিবুল্লাহর মা কহিনুর খানম বাদী হয়ে কয়রা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।