মৃত্যুর পর জানা গেল তাঁর পরিচয়, লাশ ফিরল আপন ঠিকানায়

আতাউরের লাশ স্বজনেরা জয়পুরহাটে নেওয়ার আগে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সামনে তাঁর জানাজা হয়
ছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘ ১৮ বছর তাঁর বসবাস ছিল ফেনী শহরে। কিন্তু শহরের কেউ জানতেন না তাঁর নাম–পরিচয়। এ প্রশ্নের উত্তরও কখনো কাউকে দেননি তিনি। শহরের রাজাঝির দিঘিরপাড়, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে দিনভর ঘুরে বেড়াতেন। পরনে থাকত এক টুকরা বস্তা। কারও সঙ্গে তেমন আলাপ বা কথাও বলতেন না। কেউ কিছু দিলে খেতেন। না দিলে বিরক্ত করতেন না।

এই মানুষের পরিচয় জানা গেল মৃত্যুর পর। তাঁর নাম আতাউর রহমান ওরফে বুলবুল (৫০)। ১৮ বছর অজ্ঞাত থেকে এখন ফিরছেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় নিজ বাড়িতে। তবে জীবিত নয়, যাচ্ছেন লাশ হয়ে। উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের আবদুস সাত্তারের ছেলে তিনি।

আতাউরের ছোট ভাই রেজাউল করিম বলেন, তাঁর ভাই ১৯৮৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। ২০০৬ সালে তাঁদের বাবার মৃত্যুর পর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। তিনি বলেন, ‘নিখোঁজের প্রায় ১০ বছর পর আমরা আতাউরের ফেনীতে থাকার বিষয়টি জানতে পারি। তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু অনেক জোরজবরদস্তি করেও তাঁকে নেওয়া যায়নি। এর পর থেকে যাতায়াতের দূরত্বের কারণে বছরের পর বছর তাঁর খবরাখবর আমরা পাইনি।’

ফেনী শহরের স্থানীয় লোকজন জানান, ১৮ বছর ফেনী শহরে চলাফেরা করলেও কখনো কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত করেননি আতাউর। নিজের মতো করেই থাকতেন। রাস্তাঘাট, রেলপথ, বাসস্ট্যান্ডসহ ফেনী শহরের সব জায়গায় ছিল তাঁর পদচারণ। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ হয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান।

মৃত্যুর পর ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সহায়’–এর স্বেচ্ছাসেবকেরা পরিচয়হীন আতাউরের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে দিলে পরিচয় মেলে তাঁর।

আতাউরের ছোট ভাই ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মশিউর রহমানসহ ছয় স্বজন তাঁর লাশ নিতে ফেনীতে আসেন। লাশটি জয়পুরহাটে নিয়ে তাঁর মা-বাবার কবরের পাশে দাফন করা হবে। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আতাউরের লাশসহ স্বজনেরা ফেনী থেকে জয়পুরহাটের উদ্দেশে রওনা হন।

ফেনীর সামাজিক সংগঠন সহায়ের সভাপতি মঞ্জিলা মিমি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আতাউরকে হাসপাতালে ভর্তি করে সেবাশুশ্রূষা দিয়েছেন। মৃত্যুর পর লাশটির পরিচয় শনাক্ত ও পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে তাঁরা খুশি। লাশ ফেনী থেকে নেওয়ার আগে হাসপাতালের সামনে আতাউরের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান তিনি।