রোয়াংছড়িতে আওয়ামী লীগ নেতাসহ বম জনগোষ্ঠীর তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

বান্দরবান জেলার মানচিত্র

বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে আজ সোমবার বিকেলে এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ বম জনগোষ্ঠীর তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

তিনজন গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন, নাকি কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী গুলি করে হত্যা করেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম।

এর আগে গত ৭ এপ্রিল একই উপজেলার খামতাংপাড়ায় বম জনগোষ্ঠীর আটজন নিহত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন জুরভারংপাড়ার ও একজন পাইংখিয়ংপাড়ার বাসিন্দা। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের গোলাগুলিতে ওই আটজন নিহত হন বলে সে সময় পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। আর ২২ মার্চ রামথারপাড়া বৃদ্ধ কার্বারিকে (পাড়াপ্রধান) গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।

পাড়াবাসীর মতে, নিহত তিনজন হলেন নেমথাং বম (৪৩), লাললিয়ান বম ওরফে পালম (৩২) ও সিমলিয়ান থাং বম (৩০)। পুলিশও গুলিবিদ্ধ তিনজনের নাম নিশ্চিত করেছে। রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চহ্লামং মারমা ও রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা জানিয়েছেন, নিহত নেমথাং বম রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে পাইংখিয়ংপাড়া এলাকায় দুপুরে গুলির শব্দ শোনা যায়। বিকেলের দিকে তিনজনের লাশ পড়ে রয়েছে মর্মে সংবাদ পাওয়া যায়। নিহত তিনজনই রৌনিনপাড়ার বাসিন্দা। ঘটনার পর পাইংখিয়ংপাড়ার পাড়াবাসী ঘরবাড়ি ছেড়ে বনজঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাইংখিয়ংপাড়া ও রৌনিনপাড়ার লোকজন ও একজন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে সকালে রোয়াংছড়ি উপজেলা সদরে সরকারিভাবে চাল বিতরণের কথা ছিল। নেমথাং বম ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার হিসেবে পাড়ার কয়েকজনকে নিয়ে চাল নেওয়ার জন্য উপজেলা সদরে আসছিলেন। পথে তাঁকেসহ তিনজনকে অস্ত্রধারীরা গুলি করে হত্যা করেছে।

রোয়াংছড়ি থানার উপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। বান্দরবান পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনজনকে পাহাড়ি কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলি করে হত্যা করেছে, নাকি তাঁরা দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার দুর্গম এলাকায় ও রাঙমাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে নতুন সংগঠন কেএনএফের তৎপরতার বিষয়টি জানাজানি হয়। তখন থেকে সেখানে অশান্ত অবস্থা চলে আসছে। কেএনএফের গোপন আস্তানায় সমতলের জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের সংবাদের ভিত্তিতে দুই সংগঠনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩ অক্টোবর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। এপ্রিল থেকে অন্য একটি সশস্ত্র দলের সঙ্গে কেএনএফের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।