পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে ৮ ঘণ্টার গণনায় মিলল রেকর্ড সাড়ে ৮ কোটি টাকা
কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের ১১টি দানসিন্দুক খুলে ২৮ বস্তা টাকাসহ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে। আজ শনিবার সকাল সাতটায় সিন্দুক খোলার পর থেকে এখনো গণনার কাজ চলছে।
বেলা তিনটা পর্যন্ত গুনে অতীতের রেকর্ড ভেঙে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এক হাজার ও পাঁচ শ টাকার বান্ডিলের ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা রূপালী ব্যাংকে জমা করতে পাঠানো হয়েছে।
রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সর্বশেষ গত বছরের ৩০ নভেম্বর পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খুলে রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এবার বেলা তিনটা পর্যন্ত গুনে সাড়ে আট কোটি টাকার মতো পাওয়া গেছে। এখনো গণনা চলছে। এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৯ কোটি টাকার ওপরে হতে পারে। সন্ধ্যা নাগাদ গণনা শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
শহরের নরসুন্দা নদীতীরের এই মসজিদের দানসিন্দুকগুলো প্রতি তিন থেকে চার মাস পরপর খোলা হয়। ৪ মাস ১২ দিন পর আজ সকাল সাতটায় দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়। জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর নেতৃত্বে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক জেসমিন আক্তারের উপস্থিতিতে প্রথমে টাকাগুলো সিন্দুক থেকে বের করে বস্তায় ভরা হয়।
সিন্দুক খোলার সময় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাসহ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রূপালী ব্যাংকের এজিএম রফিকুল ইসলাম ও মসজিদের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া ও পাগলা মসজিদের এতিমখানাসহ দুটি মাদ্রাসার প্রায় আড়াই শ শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৭০ জন কর্মচারী, মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৪০০ লোক টাকা গণনা করছেন।
মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা যায়, ছয়তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প করা হবে। এতে অর্ধলাখ মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারবেন। একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। ইতিমধ্যে কমপ্লেক্স নির্মাণে পরামর্শক হিসেবে প্রকৌশলীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যাচাই–বাছাই করে নকশা চূড়ান্ত করলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। ৩০ নভেম্বর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সব মিলিয়ে ব্যাংকে এখন পর্যন্ত মোট ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৬ টাকা জমা হয়েছে। আজ টাকা গণনা শেষে আগের টাকার সঙ্গে ব্যাংকে জমা হবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, সকাল থেকে সিন্দুক খোলা ও বস্তায় ভরে গণনা শেষে ব্যাংকে টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনিসহ পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। গণনার দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সিন্দুকের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন।
শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি গড়ে ওঠে। কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করে থাকেন। মানুষ টাকাপয়সা ছাড়া স্বর্ণালংকার দান করেন। এ ছাড়া গবাদিপশু, হাঁস–মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়।