ময়মনসিংহে তিন দশক আগে বেদখল হওয়া মৃত শেরপুকুরটি উদ্ধার
ময়মনসিংহ শহরের অন্যতম একটি পুকুর ছিল আমলাপাড়া আবাসিক এলাকার শেরপুকুর। তিন দশক আগেও পুকুরটি ছিল প্রাণবন্ত। ইজারা নিয়ে ধীরে ধীরে মাটি ফেলে পুকুরটি মৃত করে ফেলা হয়। ২০১২ সালের পর পুকুর শ্রেণির ওই জমিটি আর একসনা বন্দোবস্ত দেয়নি প্রশাসন। এরপরও কাগজপত্রে থাকা পুকুরের জমিটি বেদখল হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর সেই জমি উদ্ধার করেছে প্রশাসন।
আজ বুধবার দখলমুক্ত করতে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান রনি অভিযানের নেতৃত্ব দেন। প্রশাসনের ভাষ্য, উদ্ধার হওয়া জমির মূল্য প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
বেলা তিনটার দিকে পুলিশ ও খননযন্ত্র নিয়ে পুকুর শ্রেণির জমিতে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। শুরুতে দেয়াল ভেঙে ভেতরের আধা পাকা দুটি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বাঁশের খুঁটিতে লাল প্যানাফ্লেক্সে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি উল্লেখ করে সরকারি অনুমতি ব্যতীত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ময়মনসিংহ টাউন মৌজার ৩১৭৯ ও ৩৫০২ দাগে ২৫ শতক জমি পুকুর শ্রেণির বলে উল্লেখ করা হয়।
অভিযানের সময় এলাকাবাসীসহ সড়কে চলাচলকারী হাজারো মানুষ জড়ো হন। প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত তিনজন জানান, পুকুরটি একসময় পানিতে থইথই করত। মাছ চাষের জন্য ইজারা নিয়ে ধীরে ধীরে ভরাট করা হয়। এখন সেখানে পুকুরের কোনো চিহ্ন নেই। পুকুরের তিন দিক স্থাপনায় ঘেরা।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান বলেন, ২৫ শতকের পুকুরটি ২০১২ সাল পর্যন্ত ইজারা দেওয়া ছিল। সর্বশেষ ইজারাগ্রহীতা ছিলেন রেজাউল করিম নামের এক ব্যক্তি। এরপর কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। পুকুর হিসেবে একসনা বন্দোবস্ত দিলেও সেটি ভরাট করা হয়। তিনি বলেন, আগে জমিটি অর্পিত সম্পত্তি থাকলেও এখন ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে জমিটির মালিক জেলা প্রশাসন। এসএ ও বিআরএস রেকর্ডে পুকুর উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে সেটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়।
প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের অর্পিত সম্পত্তিভুক্ত ২৫ শতকের জমিটি তিন দশক আগেও পুকুর ছিল। ১৯৮৪ সালে পুকুরটি মাছ চাষের জন্য ব্যক্তি খাতে ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে মাছ চাষ করা হয়নি। বরং দিনে দিনে ময়লা-আবর্জনা-মাটি ফেলে পুকুরটি ভরাট করা হয়। সবশেষ সেটি শহরের ব্যবসায়ী মো. রেজাউল করিমের কাছে ইজারা দেওয়া ছিল। ২০১২ সালে সেই ইজারাও বাতিল করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান আরও বলেন, এক সপ্তাহ আগে সরকারের মালিকানাসংক্রান্ত নোটিশ স্থাপন করা হয়। যাঁদের দখলে ছিল তাঁদের মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল কিন্তু তাঁরা সরাননি। উচ্ছেদ শুরুর পর মালামাল সরাতে শুরু করেন তাঁরা।
অভিযানের সময় দুটি আধা পাকা মেস থেকে মালামাল সরাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। তাঁদের একজন আশরাফ মিয়া বলেন, ‘আমি আজাদ ফুটওয়্যার নামে একটি কোম্পানিতে কাজ করি। কোম্পানিই এখানে মেসে আমাদের থাকতে দিয়েছিল।’ সেখানে জমিটি দখল করে রাখা ব্যক্তি বা দায়িত্বশীল কাউকে দেখা যায়নি।
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমিন কালাম বলেন, পুকুরটি ইজারা নিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়। শেরপুকুরসহ অন্য সরকারি পুকুরগুলো দখলমুক্ত করতে তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। পুকুরটি যেহেতু উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে আবার পুকুর কাটার দাবি জানান তিনি।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন বেদখল থাকা পুকুরটি উদ্ধার করা হয়েছে। ধীরে ধীরে অন্যান্য অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে সরকারি জমি উদ্ধার করা হবে। পুকুরটির স্থলে আবার পুকুর কাটতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন। এরপরও তাঁরা চেষ্টা করবেন।