আলোঝলমলে সকালে বগুড়ায় স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে উৎসবের আমেজ

স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে বগুড়া পর্বে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় । শুক্রবার সকালে বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল ও কলেজ অডিটোরিয়ামে

জ্যৈষ্ঠের আলোঝলমলে রোদেলা সকালে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা আসতে শুরু করেন বগুড়ার পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে। সকাল ৯টার আগেই পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে মাঠ। শিক্ষার্থীদের হইহুল্লোড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। তারা আসে আঞ্চলিক স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে। বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চোখে–মুখে ছিল স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুশির উচ্ছ্বাস।

আজ শুক্রবার সকালে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে আঞ্চলিক ‘স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড ২০২৪’ উদ্বোধন করেন বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামির হোসেন মিশু। এ সময় আইসিডিডিআরবির প্রোগ্রাম অফিসার বিনয় চন্দ্র সরকার উপস্থিত ছিলেন।

যক্ষ্মার বিস্তার রোধ ও স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়ন ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পরিচালনায় প্রথম আলো এই স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের আয়োজন করেছে। এতে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো বন্ধুসভা।

উদ্বোধনী বক্তব্যে সামির হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও যক্ষ্মা নির্মূলে এটি একটি দারুণ উদ্যোগ। মানুষের স্বাস্থ্যসচেতনতায় এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্বাস্থ্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের যত্নশীল হতে সহায়ক হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্য নিয়ে পড়াশোনার আগ্রহ তৈরি হবে। চিকিৎসক হওয়ার উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে। সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল স্বাস্থ্যসচেতন প্রজন্ম গড়ে উঠবে।

সকাল সোয়া ৯টায় বন্ধুসভার বন্ধুরা সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের কক্ষে নিয়ে যান। সাড়ে ৯টা থেকে চলে তিনটি ক্যাটাগরিতে কুইজ পরীক্ষা। ১০টি কক্ষে ৩০ মিনিট ধরে চলা এই কুইজ পরীক্ষায় অংশ নেয় ৫০০ শিক্ষার্থী। এ দায়িত্বে ছিলেন বগুড়া বন্ধুসভার বন্ধুরা। অলিম্পিয়াডে ছিল কিশোর আলো ও বিজ্ঞান চিন্তার স্টল।

পরীক্ষা পর্বের পর চলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দলভিত্তিক তৈরি করে আনা দেয়ালিকা প্রদর্শনী প্রতিযোগিতা। সেখানে বিচারকেরা শিক্ষার্থীদের তৈরি করা দেয়ালিকা দেখে বিচারকার্য পরিচালনা করেন।

দেয়ালিকা প্রদশর্নী দেখে মুগ্ধ বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী সাদমান শাহরিয়ার বলে, ‘এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার আগে যক্ষ্মা সর্ম্পকে কোনো ধারণা ছিল না। অলিম্পিয়াডের জন্য যক্ষ্মা সর্ম্পকে প্রথম আলো এবং গুগল থেকে অনেক তথ্য জানতে পেরেছি। শরীরের অনেক রোগবালাই সর্ম্পকে নতুন নতুন বিষয়ে জানতে পেরেছি। এসব তথ্য যক্ষ্মা রোগ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করবে। পরিবারে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তেও কাজে লাগবে।’ বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তি পাশা বলে, ‘এখানে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। কুইজ পরীক্ষার জন্য পড়তে গিয়ে স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক নতুন নতুন তথ্য জানতে পেরেছি।’

ফল তৈরির ফাঁকে পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে শুরু হয় অতিথিদের আলোচনা ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রশ্নোত্তর পর্ব। অতিথির বক্তব্য পর্বে যক্ষ্মা রোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন যক্ষ্মা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দেবাশীষ কুমার গুপ্ত। তিনি বলেন, দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩ লাখ ৭৯ হাজার এবং প্রতিদিন গড়ে ১০৩৮ জন মানুষ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মার কারণে বছরে ৪২ হাজার এবং প্রতিদিন গড়ে ১১৫ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে। আক্রান্ত রোগীর হাঁচি, কাশির মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু বাতাসে ছড়ায়। এই জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশের মাধ্যমে সুস্থ মানুষকেও যক্ষ্মায় আক্রান্ত করে। যক্ষ্মারোগী বাতাসে জীবাণু ছড়ানোর মাধ্যমে সুস্থ মানুষের দেহে যে মারণাস্ত্র ছড়াচ্ছে, সচেতন না হলে তাতে নির্ঘাত মৃত্যু ঘটবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আইসিডিডিআরবির প্রোগ্রাম অফিসার বিনয় চন্দ্র সরকার, প্রথম আলো বগুড়ার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার পারভেজ, বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ফুলবর রহমান, প্রথম আলো বগুড়া বন্ধুসভার সভাপতি চন্দন কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে বগুড়া পর্বে পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে প্রাইমারি থেকে ৫ জন, জুনিয়র থেকে ১৮ জন এবং সেকেন্ডারি থেকে ৭ জন করে ৩ ক্যাটাগরিতে মোট ৩০ জনকে বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়। এ ছাড়া দেয়ালিকা প্রতিযোগিতা থেকে জুনিয়র ও সেকেন্ডারি ক্যাটাগরি থেকে তিনটি দলের মোট ৯ জনকে বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়। বিজয়ীরা ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। বিজয়ীদের হাতে সনদ, মেডেল ও টি-শার্ট তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বগুড়া বন্ধুসভার কার্যনির্বাহী সদস্য আল গালিব খান। অনুষ্ঠান সফল করতে সহযোগিতা করেন বগুড়া বন্ধুসভার চন্দন রায়, দেলোয়ার হোসেন, নকীব খান, শামিম হোসেন, নুজহাত আশা, সুমাইয়া শীলাসহ অন্য বন্ধুরা।