মাছ চাষের পুকুর খুঁড়তে কোপ পড়ল টিলায়

চট্টগ্রামের রাউজানের ডাবুয়া ইউনিয়নে টিলা কেটে মাছ চাষের জন্য পুকুর তৈরি করছেন ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে মুহাম্মদ সাজ্জাদ ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটায়ছবি- প্রথম আলো

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা সদরের শহীদ জাফর সড়ক ধরে পাঁচ কিলোমিটার গেলে চোখে পড়বে একটি টিলা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি অন্ধ ফকিরের টিলা নামে পরিচিত। টিলার তিন পাশে খননযত্রের কোপের চিহ্ন। পাহাড়ের পাদদেশে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে মাটি কাটার ফলে। ১৫ দিন ধরে চলছে এই মাটি কাটার কাজ। সামনের বর্ষায় অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে টিলা ধসে কৃষিজমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আশপাশের বাসিন্দারা।

টিলার মাটি কেটে মাছ চাষের জন্য পুকুর খননের অভিযোগ পাওয়া গেছে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে মো. সাজ্জাদ ইসলামের (৪৫) বিরুদ্ধে। পুকুর খনন করতে কাটা হয়েছে টিলার এক পাশে থাকা কৃষিজমির মাটিও। গত আমন মৌসুমেও সেখানে ধানের চাষ হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হলদিয়া ইউপির চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এটি তাঁর নিজের কেনা টিলা। পাশের ধানি জমিটিও অনেক দিন আগেই কিনে নিয়েছেন তিনি। এখন তাঁর নিজের জমিতে মাছ চাষের জন্য পুকুর কাটা হচ্ছে। তবে পুকুর কাটতে গিয়ে টিলার কিছু অংশ কাটা পড়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

উপজেলা সদরের ডাবুয়া ইউনিয়নের পূর্ব ডাবুয়া গ্রামে টিলাটির অবস্থান। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক পাশে খোলা ধানি জমি আর তিন পাশ ঘেরা টিলা। টিলার পাড়ে নানান ফলদ-বনজ গাছের গোড়া কাটা। টিলার ৩ পাড়ে ২০–২৫ ফুট করে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে।

নিচে গভীর খাদ করা হয়েছে আরও ২০ থেকে ২৫ ফুট। ভারী বৃষ্টি হলে বা পাহাড়ি ঢলে টিলা ধসে আশপাশের জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, কয়েক দিন আগেও খননযন্ত্র দিয়ে টিলা কাটা হয়েছে। রমজানে শ্রমিকেরা বিরতি দেওয়ায় এখন কাজ বন্ধ। দুই–এক দিন পর শ্রমিক এলে আশপাশের আরও টিলা কাটা হবে।

ডাবুয়া ইউপির সদস্য মুহাম্মদ সাজ্জাদ আলম বলেন, ১৫–২০ দিন আগে টিলা কাটার কাজ শুরু হয়।

তখন তিনি নিজে গিয়ে টিলা ও জমি কাটার কাজে বাধা দেন। জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা ওপরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অনুমতি নিয়ে টিলা কাটছেন বলে জানান।

পাহাড় ও টিলা সংরক্ষিত ভূমি জানিয়ে রাউজান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিদোয়ানুল ইসলাম বলেন, পাহাড়-টিলায় কোপ দেওয়া যাবে না। কোনো চাষ উপযোগী কৃষিজমি খনন করে পুকুর বানানোর নিয়ম নেই। পূর্ব ডাবুয়ায় টিলা কাটা ও কৃষিজমি খনন করে মাছ চাষের পুকুর বানানোর খবর তিনি জানেন না। আইন অমান্যকারী যে–ই হোক, খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।