ময়মনসিংহে হিজড়াদের মসজিদ, এক কাতারে নামাজে দাঁড়ান সবাই

ময়মনসিংহ শহরতলির চর কালীবাড়ির আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় হিজড়াদের মসজিদ এটিছবি: প্রথম আল

ময়মনসিংহ শহরতলির চর কালীবাড়ি এলাকায় সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের কিছু ঘরে বসবাস করেন প্রায় ৪০ জন হিজড়া। তাঁরা আর দশজনের সঙ্গে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারতেন না। এখন তাঁদের নিজেদের মসজিদ আছে, সেখানে সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন।

তবে হিজড়াদের মসজিদটি খুব সহজে হয়নি। সেই গল্প জানতে ফিরতে হবে কিছুটা পেছনের সময়ে। এ বিষয়ে সেখানকার কয়েকজন হিজড়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একদিন হিজড়াদের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। অনুষ্ঠান শেষে তাঁরা কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনারকে অনুরোধ করলেন একটি মসজিদ করে দেওয়ার জন্য। এর কিছুদিন পর চর কালীবাড়ি এলাকায় হিজড়াদের জন্য একটি কবরখানা করা হয়। পরে বিভাগীয় কমিশনার কবরখানার পাশে একটি মসজিদ করে দেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েকজন হিজড়া ওই দিন অনুষ্ঠান শেষে কেঁদে কেঁদে বলেন, তাঁরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারেন না। পরে আমি খাস জায়গায় তাঁদের জন্য মসজিদের ব্যবস্থা করে দিই। মসজিদ নির্মাণের জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ আমার কাছে ছিল না। তবে একজন দানশীল মানুষ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন।’

মসজিদ উদ্বোধনের দিনের কথা স্মরণ করেন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। তিনি বলেন, ‘মসজিদটি যে দিন আমি উদ্বোধন করতে যাই, সে দিন আমার মধ্যে কিছুটা ভয় ছিল এই ভেবে যে সাধারণ মানুষের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়। তবে সেখানে গিয়ে দেখলাম, আমার আগেই এলাকার মুরব্বিরা এসে উপস্থিত। এখন তো শুনি রোজার মাসে ওই মসজিদে তারাবির নামাজ হচ্ছে। হিজড়ারা পবিত্র কোরআন শিখছেন। অনেক সাধারণ মানুষও ওই মসজিদে নামাজ পড়ছেন। খবরটি আমার কাছে দারুণ লেগেছে।’

গতকাল শনিবার চর কালীবাড়ির আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় কথা হয় জয়িতা তনু নামের এক হিজড়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি বিভাগীয় কমিশনার তাঁদের জন্য করবখানা ও মসজিদটি উদ্বোধন করেন। নিজেদের শ্রমে তাঁরা মসজিদটি নির্মাণ করেন। এখানে নামাজের পাশাপাশি পবিত্র কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। একসঙ্গে ৬০ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদে আর দশজনের সঙ্গে নামাজ পড়তে পেরে তাঁরা আনন্দিত।

মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ কারীমুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াই। কারও কোনো অভিযোগ নেই। সাধারণ মানুষও হিজড়াদের সঙ্গে নামাজ পড়েন। ঢাকার বড় আলেমদের মাধ্যমে জেনেছি, এটি দেশের একমাত্র হিজড়াদের মসজিদ। নিয়মশৃঙ্খলা ও শিষ্টাচার মেনেই মানুষগুলো বসবাস করছেন। তাঁরা মসজিদে নামাজ পড়েন।’

এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমরা হিজড়াদের সঙ্গে এক কাতারে নামাজ পড়ি। বড় আলেমদের কাছে জেনেছি, এটি ধর্মীয়ভাবে কোনো সমস্যা না।’