কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির নেতাদের লাঞ্ছিতের অভিযোগে জিডি

বৈঠক চলাকালীন হঠাৎ ছাত্রলীগ ও কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে একদল লোক ঢুকে শিক্ষকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। গতকাল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরেছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, হেনস্তা, মারমুখী আচরণ ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. আবু তাহের গতকাল সোমবার মধ্যরাতে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় এই জিডি করেন।

জিডিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের চুক্তিভিত্তিক পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. ইমরান হোসাইনসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০-৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির নেতারা গতকাল সোমবার বিকেলে উপাচার্যের দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যান। শিক্ষকেরা উপাচার্যের সঙ্গে তাঁদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলেন। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন নিয়ে কথা তোলেন। তাঁরা বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে কথা বলেন। একপর্যায়ে উপাচার্য নিয়মের বাইরে কোনো কাজ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। তখন উপাচার্যের সঙ্গে সমিতির নেতাদের উচ্চবাচ্য হয়। তখন কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী উপাচার্যের দপ্তরে ঢুকে পড়েন। তাঁরা উপাচার্যের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ এনে শিক্ষক নেতাদের গালিগালাজ করেন। এ সময় শিক্ষকদের মারার জন্যও কেউ কেউ তেড়ে আসেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।

আরও পড়ুন

শিক্ষক সমিতির জিডিতে বলা হয়েছে, উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও সাবেক শিক্ষার্থী (ছাত্রলীগ নেতা) ইমরান হোসাইনের নির্দেশে জোর করে উপাচার্যের দপ্তরে প্রবেশ করেন বিবাদীরা। এরপর তাঁরা মারমুখী আচরণ করেন। তখন ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন শিক্ষকের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব।’ তখন শিক্ষকেরা প্রক্টরিয়াল বডির সাহায্য চান। কিন্তু প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেননি৷ উল্টো বিবাদীরা সাত-আটবার মারমুখী আচরণ করেন। এতে শিক্ষকেরা নিরাপত্তাহীন অবস্থায় আছেন।

জিডিতে আরও ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা (বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই)। তাঁরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী অনুপম দাস, মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান, নৃবিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান, ফার্মেসি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ইমাম হোসাইন, বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাকিব ও রসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা ই এলাহী বলেন, উপাচার্যের দপ্তরে চিল্লাচিল্লি শুনে তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, ওই ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায় তাঁরা জিডি করেছেন।

জিডির তথ্য নিশ্চিত করে সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।