ইচ্ছার বিরুদ্ধে কলেজে ভর্তির আবেদন, বিপাকে শিক্ষার্থীরা

পটুয়াখালী জেলার মানচিত্র

যোবায়দা আক্তার এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আজ বুধবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে জানতে পারে, তাঁর অজান্তেই ভর্তির প্রাথমিক আবেদন করা হয়ে গেছে। পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে যোবায়দা। তার প্রত্যাশা ছিল, বাড়ির কাছে মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালতলী আখতার হোসেন চৌধুরী মেমোরিয়াল কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার।

যোবায়দা আক্তারের বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে। সে সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আজ অনলাইনে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন পূরণ করতে এসে জানতে পারে, ইতিমধ্যে তার আবেদন ফরম পূরণ করা হয়ে গেছে। সেখানে প্রথম পছন্দ দেওয়া হয়েছে উপজেলার হাওলাদার ফাউন্ডেশন ওমেন্স কলেজ। আরও চারটি প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যোবায়দার পছন্দের একটিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও নেই।

যোবায়দা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়ি, তখন থেকেই পছন্দ করে রেখেছিলাম, মাধ্যমিক পাস করলে আখতার হোসেন চৌধুরী মেমোরিয়াল কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হব। ওখানে আমার আরও দুই বোন পড়াশোনা করেছে। কিন্তু আমাকে না জানিয়ে কে বা কারা অন্য প্রতিষ্ঠানে আমার হয়ে আবেদন করে দিয়েছে।’

একই অভিযোগ রামপুর গ্রামের ওসমান গনি, সাহানা আক্তার, বাজিতা গ্রামের তানিয়া আক্তার, পারশিবপুর গ্রামের সাদিয়া ও আঁখি আক্তারের। তারা সবাই আজ অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফরম পূরণ করতে এসে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারেনি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে মির্জাগঞ্জ উপজেলার হাওলাদার ফাউন্ডেশন ওমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ খবির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভর্তির আবেদন ফরম পূরণ আমরা করিনি। অসাবধানবশত দুয়েকটি হতে পারে। শিক্ষার্থীরা-অভিভাবকেরা চাইলে আবেদন বাতিল করে দেওয়া হবে।’

সুমা আক্তার ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে দেখে, তার রোল ও নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে রামপুর সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তির প্রাথমিক আবেদন করা হয়েছে। মাদ্রাসাটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আরও অনেকের। রামপুর সিদ্দিকীয় ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নরুল হক শিক্ষার্থীদের হয়ে অনলাইনে ভর্তির আবেদন পূরণ করার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে দাখিল পাস করেছে। আমরা কিছু শিক্ষার্থীর প্রাথমিক আবেদন পূরণ করে দিয়েছে। যদি ওইসব শিক্ষার্থীর অন্য প্রতিষ্ঠানে যেতে চায়, তাহলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের আবেদন বাতিল করা হবে।’

শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভর্তির আবেদন করা আইনগত অপরাধ জানিয়ে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যান আ ফ ম বাহারুল আলম (ভারপ্রাপ্ত) প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে আবেদন করলে তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ করে দেব এবং পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের অনুমতি না নিয়ে ভর্তি ফরম পূরণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’