চট্টগ্রাম থেকে সাত ট্রেন ছেড়েছে ২ থেকে ১২ ঘণ্টা দেরিতে

ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছার কথা ছিল বেলা সাড়ে ১১টায়। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টায়ও স্টেশনে আসেনি ট্রেন। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না আসায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আজ বিকেলে চট্টগ্রাম স্টেশনেজুয়েল শীল

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ট্রেন দুর্ঘটনায় দ্বিতীয় দিনও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচলের সময়সূচির বিপর্যয় ঘটেছে। আজ সোমবারও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেনগুলো ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের ২ থেকে ১২ ঘণ্টা পর। আজ এক জোড়া ট্রেনের যাত্রাও বাতিল করা হয়।

ট্রেনের সূচি বিপর্যয়ের কারণে সাধারণ যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে হয়েছে। পবিত্র রমজানের সময় স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়েন তাঁরা। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগের শেষ ছিল না।

চট্টগ্রাম স্টেশন ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কুমিল্লায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর রেললাইন উপযুক্ত করতে সময় লেগেছে। তাই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও চলছে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের তথ্য অনুযায়ী, আজ ভোর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অন্তত ৭টি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায়নি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়ার কথা ছিল ভোর ৪টায়। কিন্তু প্রায় তিন ঘণ্টা পর সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে এ ট্রেন ছেড়ে যায়। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস সকাল ৯টার পরিবর্তে ৪৫ মিনিট দেরিতে পৌনে ১০টায় ছাড়ে।

সিলেটগামী উদয়ন আগের দিন রোববার রাত পৌনে ১০টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে গন্তব্যে রওনা দেওয়ার সময় ছিল। কিন্তু এ ট্রেন ছেড়েছে পরদিন সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ১২ ঘণ্টা পর এই ট্রেন ছাড়ে।

ঢাকাগামী চট্টলা সকাল ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে ৫ ঘণ্টা পর ১০টা ৫০ মিনিটে। ঢাকাগামী আরেকটি ট্রেন কর্ণফুলী সকাল পৌনে ১০টায় যাওয়ার কথা থাকলেও ছেড়ে গেছে বেলা আড়াইটায়।

আর চাঁদপুরগামী সাগরিকা এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। একইভাবে চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামগামী সাগরিকার যাত্রা বাতিল করা হয়। আজ বেলা ৩টা পর্যন্ত শুধু ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় ছেড়ে যায়।

ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী আরেকটি ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছার কথা ছিল আজ বেলা সাড়ে ১১টায়। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টায়ও এই ট্রেন চট্টগ্রামে আসেনি। এই ট্রেনে  কমলাপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম স্টেশন থেকেও যাত্রী পরিবহন করা হয়। ট্রেন না আসায় চট্টগ্রামের যাত্রীদের স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

এই ট্রেনের দুই যাত্রী নূর আহমেদ ও রবীন্দ্র বিজয় বড়ুয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় বলেন, ট্রেনে করে কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য স্টেশনে এসেছেন সকালেই। কিন্তু তিন থেকে চার ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ট্রেনের দেখা নেই। অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন।

ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছার কথা ছিল বেলা সাড়ে ১১টায়। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টায়ও স্টেশনে আসেনি ট্রেন। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না আসায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আজ বিকেলে চট্টগ্রাম স্টেশনে
জুয়েল শীল

এর আগে গতকাল দুপুরে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হলে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে গতকাল সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়লেও সেগুলোর যাত্রাবিরতি দেওয়া হয় ফেনী স্টেশনে। আজ ভোরে নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলস্টেশনের অদূরে দুর্ঘটনাস্থলে রেললাইন ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত করা হয়। এরপর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ছাড়ে।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলস্টেশনের অদূরে তেজের বাজার রেলক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনায় বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এ সময় অন্তত আধা কিলোমিটার রেললাইন দুমড়েমুচড়ে যায়। লাইনচ্যুত বগিগুলো পাশের মাঠে ও বাড়িতে গিয়ে পড়ে। এ সময় যাত্রীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরে যাচ্ছিল। বেলা পৌনে ২টার দিকে তেজের বাজার রেলক্রসিংয়ের দক্ষিণে শিহর চিওড়া ও উরুকুটি এলাকার মাঝামাঝি স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লায় গতকাল ট্রেন দুর্ঘটনার পরপর স্টেশনমাস্টার বলেছিলেন, গরমে রেললাইন বেঁকে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ বক্তব্যের সত্যতা পাননি রেলের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা। তাঁদের ধারণা, ২০৮ নম্বর রেলওয়ে সেতুর নড়বড়ে কাঠের স্লিপার ও ত্রুটিপূর্ণ নাট-বল্টু দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।