গণ-ড্রপ নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে ২৪ ক্রেডিটে ডিগ্রি দেওয়ার সিদ্ধান্ত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ২৪ ক্রেডিটে ডিগ্রি প্রদান এবং পরবর্তী সেমিস্টারের সঙ্গে কোর্স শেষ করার বিষয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে একটি অবহিতকরণ চিঠি দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা এ চিঠি দেন।

চিঠিতে অধ্যাপক ফারজানা উল্লেখ করেন, সম্প্রতি বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণির একটি পরীক্ষায় গণ-ড্রপ নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলা বিভাগ আজ বেলা দুইটায় উচ্চশিক্ষা পর্ষদের জরুরি সভা আহ্বান করে। এতে দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রথম সিদ্ধান্তটি হলো স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে দুটি সেমিস্টারে ২৯ ক্রেডিট থাকলেও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে ২৯ ক্রেডিট সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা-সংক্রান্ত নির্দেশনা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুসারে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য ন্যূনতম ২৪ ক্রেডিট কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুধু ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২৪ ক্রেডিট সম্পন্ন করেই ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যদি প্রথম সেমিস্টারে ড্রপ দেওয়া বিষয়টি সম্পন্ন করতে চান, তাহলে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরের সেমিস্টারে ড্রপ কোর্স হিসেবে সম্পন্ন করার সুযোগ পাবেন। এ ক্ষেত্রে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ সেমিস্টারের সময়কাল সীমিত করা এবং ওই বিষয়ের পরীক্ষাটি রুটিনের প্রথমেই রাখার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি ওই শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী উপস্থিতি, টার্ম টেস্ট, পারফরম্যান্সের নম্বর বহাল থাকবে।

অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সার্বিক মঙ্গলের জন্য বাংলা বিভাগের উচ্চশিক্ষা পর্ষদের সভায় দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে অনুমোদন দেওয়ার জন্য উপাচার্যের কাছে লিখিত অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার থেকে বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন। প্রথম সেমিস্টারের একটি বিষয়ে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে তাঁরা এ কর্মসূচি করেন। এ অবস্থায় গত মঙ্গল ও বুধবার উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দুই দফায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন। উপাচার্যের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আগামী রোববার থেকে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গত ১৬ জুলাই তাঁদের প্রথম সেমিস্টারের গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্র বিষয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। কিন্তু এর আগে তাঁদের এক সহপাঠী গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এ অবস্থায় তাঁর পক্ষে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। যেহেতু ওই সহপাঠী পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, তাই তাঁর অসুস্থতায় মানবিক দিক চিন্তা করে সহপাঠীদের কেউই ওই দিন পরীক্ষায় বসতে রাজি হননি এবং বিষয়টি তাঁরা বিভাগীয় প্রধানকে জানান। পরে কোনো একদিন এ পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তখন থেকেই শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্টদের কাছে জানিয়ে আসছিলেন।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ১৭৩তম সভায় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় ওই কোর্স তাঁদের ড্রপ হয়ে যাবে এবং পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে তাঁদের এ বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। এতে গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্র বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হলে এসব শিক্ষার্থীর ফাইনাল পরীক্ষা শেষেও অতিরিক্ত আরও অন্তত ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। তাই তাঁদের শিক্ষাজীবনে ছয় মাসের জট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণেই তাঁরা আন্দোলনে নামেন।