নগরে বাসিন্দাদের খেয়া পার

সড়কপথে যেতে হলে ভুরারঘাট কিংবা দর্শনা দিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার  ঘুরে চলাচল করতে হয়।

নৌকার মাঝি রশি টেনে লোকজনকে ঘাঘট নদ পারাপার করেন। গতকাল রংপুর নগরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের পানবাড়ি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঘাঘট নদের দুই পারে দুটি বাঁশের খুঁটিতে দড়ি বাঁধা। সেই দড়ি ধরে ধরে নৌকার মাঝি এপার থেকে ওপারে নিয়ে যান। কেউ নৌকায় পার হতে না চাইলে তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হবে। এভাবে ভোগান্তি আর দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিদিন দুই পারের চার গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের পানবাড়ি এলাকার চিত্র এটি। 

পানবাড়ি এলাকায় ঘাঘট নদের দুই পারের চার গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষের বসবাস। তাঁদের নদী পারাপারের মাধ্যম খেয়ানৌকা। কেউ যদি নৌকায় যেতে না চান, তাহলে তাঁদের নগরের ভুরারঘাট কিংবা দর্শনা এলাকা দিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হয়। এতে সময় লাগে বেশি। স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সেই দাবি পূরণের আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।

নাজিরদিঘর, বনগ্রাম, ইছলিগ্রাম—তিন গ্রামের মানুষের নদী পার হয়ে প্রতিদিন পানবাড়ি বাজারে যেতে হয়। সেই সঙ্গে পানবাড়ি এলাকায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। রয়েছে পানবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু যোগাযোগের মাধ্যম একমাত্র একটি নৌকা। গতকাল শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, লোকজন খেয়ানৌকায় পারাপার হচ্ছেন। 

এখানে একটিমাত্র নৌকা রয়েছে। নৌকার মাঝি মোজাম্মেল হকও চান এখানে একটি পাকা সেতু হোক। না হলেও অন্তত মজবুত বাঁশের সাঁকোও তৈরি করা হোক। নৌকা পারাপারের জন্য নদের দুই পাড়ে দুটি বাঁশের খুঁটিতে দড়ি বাঁধা রয়েছে। এই দড়ি ধরে ধরে মোজাম্মেল হক নৌকা এপার-ওপার করেন। মোজাম্মেল বলেন, এখানে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ মানুষ নৌকায় পারাপার হন। জনপ্রতি পাঁচ টাকা করে পাওয়ার কথা। তবে সবাই টাকা দেন না।  তিনি অনেক বছর থেকে এখানে নৌকায় দুই পারের মানুষকে পারাপার করছেন। আয় বেশি হয় না। 

পানবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজিরদিঘর এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন প্রতিদিন এই নৌকায় পারাপার হয়ে থাকেন। এখন নদীতে পানি কম থাকায় ঝুঁকি কম। তবে বর্ষার সময় ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। তিনি বলেন, ‘এলাকার মানুষের পক্ষ থেকে এই স্থানে বাঁশের শক্ত সেতু নির্মাণের জন্য একাধিকবার সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু শুধুই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেতু নির্মাণ হয় না।’

বনগ্রামের বাসিন্দা কৃষক জোবেদ আলী (৬৫)। তিনি বলেন, ‘নদীর (নদ) ওপারে আমাদের নাজিরদিঘর, বনগ্রাম ও ইছলিবান্দ এলাকার মানুষের অনেক আবাদি জমি রয়েছে। তাই সব সময় যেতে হয়। কিন্তু নদী পার হতে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়।’ 

স্থানীয় ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সামসুল হক বলেন, এবার নতুন পরিষদ হলো। পানবাড়ি, নাজিরদিঘর, বনগ্রাম, ইছলিবান্দসহ চার এলাকার জনগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে এবার কিছু একটা করা হবে। 

প্যানেল মেয়র মাহমুদ হোসেন বলেন, পাকা সেতু না হলেও সিমেন্টের তৈরি আরসিসি পিলারের খুঁটি দিয়ে একটি সেতু করার উদ্যোগ করা হবে।