অ্যাসিডদগ্ধ সোনালী এসএসসি পরীক্ষায় পেলেন জিপিএ ৪ দশমিক ৯৬

অ্যাসিডদগ্ধ সোনালী খাতুন এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪ দশমিক ৯৬ পেয়েছেন
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার অ্যাসিডদগ্ধ সোনালী খাতুন এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪ দশমিক ৯৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পাটকেলঘাটার কুমিরা পাইলট বহুমুখী উচ্চবালিকা বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন সোনালী। ২০০৩ সালে মা-বাবার সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকা ছোট্ট সোনালী খাতুন অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন।

১৯ বছর আগের ওই রাতে ১৮ দিনের শিশু সোনালীকে নিয়ে মা-বাবা ঘুমিয়ে ছিলেন। দুর্বৃত্তরা রাতের অন্ধকারে সোনালীর মা ও বাবার শরীরে অ্যাসিড ছোড়ে। মা-বাবার সঙ্গে সোনালীরও মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীর ঝলসে যায়। বাঁচার আশাই ছিল না। এ ঘটনার পর প্রথম আলো ট্রাস্ট ও স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ‘স্বদেশ’ দাঁড়িয়েছিল সোনালীর পরিবারের পাশে। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সোনালী এবার সাফল্যের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সোনালীর এ সাফল্যে তাঁর মা-বাবা বেশ খুশি।

সোনালী তালা উপজেলার নকাটি গ্রামের নুর ইসলাম ও খোদেজা দম্পতির সন্তান। সোনালীর বয়স এখন ১৯। তাঁর বাবা নুর ইসলাম বলেন, প্রথম আলো ও স্বদেশ প্রথম অবস্থায় তাঁদের পাশে না থাকলে তাঁদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব ছিল। সোনালীর পড়াশোনাই হয়তো হতো না। বর্তমানে একশনএইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় মেয়ের পড়ালেখা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া জেলা অ্যাসিড কন্ট্রোল কমিটি থেকে সহযোগিতাও করা হয়েছে তাঁকে। এর আগে ২০০৬ সালে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সোনালীর নামে ১০ শতক জমি বন্ধক নিয়ে দেওয়া হয়। ওই জমির আয়ে তাঁর চলার পথ অনেকটা সুগম হয়েছে।

নুর ইসলাম বলেন, বাঁশ কাটা নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছিল প্রতিবেশীদের সঙ্গে। এ বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ দুর্বৃত্তরা ২০০৩ সালের ২৮ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে তাঁদের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এতে তাঁদের সঙ্গে সোনালীর চোখ-মুখ, মাথা ও ঘাড় ঝলসে যায়, পুড়ে যায় শরীরের একটি বড় অংশ। তিনি মনে করেননি সোনালী বেঁচে থাকবে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ঢাকায় এক বছর উন্নত চিকিৎসা শেষে সোনালী অনেকটা সুস্থ হয়।

সোনালীর এ পর্যন্ত টিকে থাকা ও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া খুব সহজ ছিল না। স্কুলে যাওয়ার বয়স হওয়ার পর সোনালীকে স্কুলে ভর্তি করা হলে অন্য শিক্ষার্থীরা তাঁকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি। প্রথম দিকে তাঁকে স্কুলে যেতে নানা রকম সামাজিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষক, সাধারণ মানুষদের মাধ্যমে কাউন্সেলিং ও সামাজিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সোনালীর স্কুলে পড়ালেখা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে।

সোনালী জানান, এসএসসির ফলে তিনি পুরোপুরি খুশি হতে পারেননি। কারণ, অল্পের জন্য জিপিএ-৫ হাতছাড়া হয়েছে। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও এত দূর আসতে পেরে তিনি খুশি। তিনি এখন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখছেন। পড়াশোনা শেষে তিনি চাকরি করতে চান, আর অ্যাসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে চান।

কুমিরা পাইলট বহুমুখী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার দাশ বলেন, সোনালীর এ সাফল্যে তিনি ও তাঁর শিক্ষকেরা গর্বিত। সোনালী তাঁর অদম্য মানসিক শক্তি ও সবার সহযোগিতায় এত দূর আসতে পেরেছেন। সোনালীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরির জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।