বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নারায়ণগঞ্জ জেলায় আটক ২৪ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণসহ নাশকতার অভিযোগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন থানায় করা মামলায় তাঁরা সন্দেহভাজন আসামি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার সাত থানা–পুলিশ তাঁদের আদালতে তুললে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, কোনো মামলায় এজাহারে নাম নেই গ্রেপ্তার নেতা–কর্মীদের। গায়েবি মামলায় তাঁদের আটক করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করে পুলিশ। বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বৃহৎ আকারের সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, অযথা কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না।
কোনো মামলার এজাহারে নাম নেই গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের। অপরাধ ছাড়াই গায়েবি মামলায় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে দাবি বিএনপির।
জেলার সাত থানার মামলার এজাহার ও আদালতে পাঠানো পুলিশের প্রতিবেদন ঘেঁটে জানা যায়, সাতটি মামলায় বিএনপির ২৪ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলার বাদী পুলিশ ও তিনটি মামলার বাদী আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা। এসব মামলায় গ্রেপ্তার নেতা–কর্মীর কারও নাম নেই।
মঙ্গলবার রাতে ফতুল্লা থানা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান মাদবরকে আটক করে পুলিশ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রঘুনাথপুরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সশস্ত্র অবস্থায় মশালমিছিল, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে করা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলম, মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য মো. হারুন, ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল কর্মী কাউসার হামিদ, জাহিদ হাসান, জোবায়ের মেহেদী, ১০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক হারুন অর রশীদকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয় ৯ অক্টোবর যানবাহন ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পুলিশের করা মামলায়। এই মামলায় গ্রেপ্তার কারোর নাম পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগের এক কর্মীর ১১ মাস আগে করা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে রূপগঞ্জ থানা–পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে দাউদপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হোসেন, চনপাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে।
বিএনপির সমাবেশের আগের দিন মঙ্গলবার রাতে ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জিল্লুর রহমান, গুলজার হোসেন, নুর আক্তার পুতুল ও গোলাম ফারুককে আটক করে বন্দর থানা–পুলিশ। পরে পুলিশ তাঁদের ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর নবীগঞ্জে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এক ছাত্রলীগ কর্মীর করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।
গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমানের ছেলে আফসুরী হক প্রথম আলোকে বলেন, বাসার সামনে থেকে তাঁর বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। এজাহারে নাম না থাকলেও আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় তাঁর বাবাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শুধু হয়রানি করতে তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার দেখানো বিএনপির বাকি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধেও সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দেখাতে পারেনি পুলিশ। পুরোনো মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে বিএনপির নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিএনপি যাতে নির্বাচনে না আসে, যাঁরা মাঠপর্যায়ের নেতা–কর্মী তাঁদের আটক করে জেলে পাঠাচ্ছে সরকার। এসব করে সরকার জনগণ ও নেতা–কর্মীদের বার্তা দিতে চায়, যাঁরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাঠে নামবেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হবে। মিথ্যা মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীদের দমিয়ে রাখা যাবে না।
বিএনপির নেতা–কর্মীদের হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে যাঁদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাঁদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশ অযথা কাউকে হয়রানি করছে না।