ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা
প্রস্তুতি সম্পন্ন, বাড়ছে পরিসর
এক্সিবিশন সেন্টারের কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ল মেলা আয়োজনের কর্মযজ্ঞ। ভেতরে চলছে সাজসজ্জার শেষ মুহূর্তের কাজ।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) ২৭তম আসর বসছে আগামী রোববার। নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) দ্বিতীয়বারের মতো বসতে যাচ্ছে এই মেলা। এরই মধ্যে স্টলের প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো।
একটা প্রাণবন্ত মেলা আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সাজসজ্জার কাজ নিয়ে তোড়জোড় চলছে।ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, পরিচালক, বাণিজ্য মেলা
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ কাঞ্চন সেতু থেকে এশিয়ান হাইওয়ে ধরে কিছু দূর এগিয়ে গেলেই পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টার। এক্সিবিশন সেন্টারের কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ল মেলা আয়োজনের কর্মযজ্ঞ। মেলার প্রবেশমুখে তৈরি করা হয়েছে দুটি ফটক। এতে দেওয়া হয়েছে মেট্রোরেলের আদল। ভেতরে চলছে সাজসজ্জার শেষ মুহূর্তের কাজ।
বিবিসিএফইসির ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুটি হল ছাড়াও এর সামনে পেছনে বসানো হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল। সেখানেই কথা হলো আবদুস সোবহান নামের এক শ্রমিকের সঙ্গে। সহকর্মীদের সঙ্গে স্টিলের তাকে রং করছিলেন তিনি। প্রথম আলোকে আবদুস সোবহান বলেন, সময়মতো কাজ শেষ করতে শ্রমিকেরা দুই পালায় প্রতিদিন ১৫ ঘণ্টা করে কাজ করেন। আশা করা হচ্ছে, সবকিছু সময়মতোই শেষ হবে।
এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরে কথা হয় আহমেদুল হক নামের একজন দোকানমালিকের সঙ্গে। বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গেল বছর পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ ও কাঞ্চন সেতু থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত এশিয়ান হাইওয়ের যানজট দর্শনার্থীদের ভুগিয়েছে। এ বছর নতুন করে এশিয়ান হাইওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ফলে যানজটের শঙ্কা বেড়েছে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন সড়ক ও এক্সিবিশন সেন্টারের বাইরের সড়কের ধুলা ভাবাচ্ছে তাঁকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করে থাকে। শেরেবাংলা নগরের চিরচেনা ঠিকানা ছেড়ে গেল বছর প্রথমবারের মতো বিবিসিএফইসিতে বসেছিল বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর। অপরিচিত স্থান, ভঙ্গুর যাতায়াত ব্যবস্থা, দোকান সংখ্যা কমসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মেলা চলাকালীন ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। তা ছাড়া ছিল করোনার আতঙ্ক। ফলে দর্শনার্থীর সংখ্যাও ছিল প্রত্যাশার চেয়ে কম।
তবে গেল বছরের চেয়ে এ বছর মেলার পরিসর, আয়োজন এবং সাজসজ্জায় বড় পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, গত বছর মেলায় স্টল ছিল ২২৫টি। এবার দেশি–বিদেশি স্টল বসছে ৩৩১টি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে মেলা শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। মেলায় প্রবেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকার টিকিট কাটতে হবে। শিশুদের জন্য টিকিটের মূল্য ২০ টাকা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, একটা প্রাণবন্ত মেলা আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সাজসজ্জার কাজ নিয়ে তোড়জোড় চলছে। মেলা শুরু হওয়ার আগেই পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হবে। কাঞ্চন সেতু থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত যানজট মুক্ত রাখতে নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। এ ছাড়া সড়কের ধুলা নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে হয়েছে। তাঁরা নিয়মিত পানি ছিটাবে।
এ বছর শেরেবাংলা নগরের আদলেই মেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান ইফতেখার। তিনি বলেন, করোনার কারণে এক বছর বিরতির পর কিছুটা ছোট পরিসরেই গেল বছর মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। এ বছর স্টলের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি মেলায় শিশুদের জন্য আলাদা একটি মিনি পার্ক রাখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত প্রতিদিন শতাধিক বিআরটিসি দোতলা বাস চলাচল করবে। এ ছাড়া মেলায় আগতদের নিরাপত্তায় র্যাব, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারি থাকবে। পাশাপাশি মেলা এলাকায় বসানো হয়েছে ৩১৯টি সিসিটিভি ক্যামেরা।
রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে মেলা উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল গ) আবির হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, মেলা এবং প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সব ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। গেল বছরের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে যানজট নিরসনে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।