বিদেশ থেকে ফিরে আমের বাগান, সুদিন ফিরেছে কামালের
পাহাড়ের টিলায় ছোট ছোট গাছে ঝুলছে আম। কোথাও ডালে ঝুলে থাকা আম প্রায় মাটি ছুঁয়েছে। কিছু আম ‘ফ্রুট ব্যাগে’ মোড়ানো। আম্রপালি, হাঁড়িভাঙা, হিমসাগর, সূর্যডিম, কিউজাইসহ ১৩টি জাতের আম রয়েছে বাগানে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জোড়আমতলে পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে এই আমের বাগান। বাগানটি স্থানীয় উদ্যোক্তা কামাল উদ্দিনের।
জীবিকার তাগিদে প্রায় ১৫ বছর বিদেশে ছিলেন কামাল উদ্দিন। এরপর দেশে ফিরে তিনি হয়ে ওঠেন কৃষি উদ্যোক্তা। আর তাতেই সুদিন ফিরেছে তাঁর। গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচজন শ্রমিকের সঙ্গে আমবাগানে কাজ করছেন কামাল উদ্দিন। জানালেন, এরই মধ্যে কিছু আম বিক্রি করেছেন, কিছু আম বিক্রির উপযোগী হচ্ছে। মৌসুমের শুরু থেকে আমের ভালো দাম পাচ্ছেন এবং পাইকারের বাগান থেকেই আম কিনে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
কামাল উদ্দিন জানান, ২০০০ সালে জীবিকার তাগিদে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান তিনি। সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ২০১৫ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, ‘শুরুতে নিজেদের পাহাড়ি জমির কিছু অংশে পেঁপেগাছ লাগাই, কিছু অংশে শিম চাষ করি। এরপর ধীরে ধীরে চাষাবাদ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ২০২০ সালে আমবাগান গড়ে তুলি’।
কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাত একর জমিতে আমের বাগান তাঁর। পরিকল্পিতভাবে তিনি আমের চারা লাগিয়েছেন। বাগানের শুরুতে নাগ ফজলি, হিমসাগর ও গুটি আমের চারা লাগিয়েছেন। এই আমগুলো মৌসুমের শুরুতেই বাজারে আসে। এরপর লাগিয়েছেন আম্রপালি জাতের আম। বাগানের শেষের দিকে লাগিয়েছেন আশ্বিনী জাতের আম। এই আম মৌসুমের শেষেই আসে। তাঁর বাগানে ২ হাজার ৫০০ আমগাছ রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ আম্রপালির গাছ লাগিয়েছেন।
নওগাঁ থেকে আমের চারা এনে বাগান শুরু করেন জানিয়ে তিনি বলেন, তিন বছরের মাথায় আমের ফলন আসতে শুরু করে। এ বছর থেকেই পুরোদমে আম পাওয়া যাচ্ছে। এবার বাগানে দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি পাঁচ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। আরও পাঁচ লাখ টাকার আম গাছে রয়েছে। ধীরে ধীরে উৎপাদন বাড়বে বলে তাঁর আশা।
কামাল উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি জমিতে অসুবিধা হলো ঘাস-লতাপাতা-আগাছা দ্রুত বাড়ে। সেগুলোকে দমিয়ে গাছ বড় করে তোলা অনেক কষ্টের। এতে খরচ বেড়ে যায়। তিনি বলেন, প্রতিবছর আমের মুকুল থেকে শুরু করে ফলন আসা পর্যন্ত ঘাস নিরোধক, কীটনাশক, সার, শ্রমিক মিলে দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়। গত বছর আমের ফলন ভালো হলেও কেবল খরচ তুলতে পেরেছেন। তবে এবার ভালো লাভ হবে বলে জানান তিনি।
কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাচ্ছেন জানিয়ে কামাল বলেন, এ বছর কৃষি বিভাগ থেকে তাঁকে ৪০০টি ফ্রুট ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেট তিনি আমের সঙ্গে বেঁধে দিয়েছেন। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ফ্রুট ব্যাগের ভেতরে থাকা আমে রোগ কম হয়। আমটিও দেখতে সুন্দর হয়। তিনি নিজেও এসব তথ্যের সত্যতা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, যে পরিমাণ জমিতে বাগান করেছেন এর সমপরিমাণ জমি এখনো তাঁর খালি পড়ে আছে। পানি ও বিদ্যুতের সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে সেই জমিও কৃষি খামারের জন্য কাজে লাগানো যাবে। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিত্রা বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, কামাল উদ্দিনের বাগানের আমে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। পোকা দমনের জন্য ব্যবহার হয় ফেরোমেন ফাঁদ। তাঁকে ৪০০টি ফ্রুট ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। ফ্রুট ব্যাগের আম বিদেশে রপ্তানি উপযোগী। সরকার চাইলে এই আম বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে।