ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৩

রোববার সন্ধ্যায় সাভারের আশুলিয়ায় ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্যাম্পাস–সংলগ্ন চানগাঁও এলাকাবাসীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় ওই এলাকার একটি মার্কেটে ভাঙচুর চালান শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্যাম্পাস–সংলগ্ন চানগাঁও এলাকাবাসীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে জড়ো করে ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন এলাকাবাসী।

ইটপাটকেলের আঘাতে দু-তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজনকে সাভারের এনাম মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিশ্ববিদ্যালয়টির মেডিকেল সেন্টার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ও ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা জানান, সম্প্রতি স্থানীয় কয়েকজন যুবকের মারধরে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়টির বস্ত্র প্রকৌশল বিভাগের (চতুর্থ বর্ষ) শিক্ষার্থী মো. হাসিবুল ইসলাম (২২)। রোববার ওই শিক্ষার্থীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিকেলের দিকে ক্যাম্পাস–সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা চানগাঁও এলাকার দোকানগুলো বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন দোকনদারেরা। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা সড়ক বন্ধ করে দেন। এলাকাবাসীর চলাচলের সড়কটি বন্ধ হওয়ায় ক্ষিপ্ত হন এলাকাবাসী। পরে তাঁরা জড়ো হন।

শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের মাঠে উপাচার্যের কাছে ড্যাফোডিলসহ একই এলাকার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য একটি পুলিশ বক্স স্থাপনসহ চার-পাঁচটি দাবি জানান। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। ওই সময় শিক্ষার্থীরা খবর পান এলাকাবাসী জড়ে হয়ে ক্যাম্পাসের ইউনুস খান স্কলার গার্ডেন-১ হলের পাশে অবস্থান নিয়েছেন। এতে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে গিয়ে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করেন। কয়েকটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে জড়ো হতে বলেন। পরে উভয়ের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

এলাকার লোকজন দেশীয় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে ওই হল–সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লেক্সের জানলার কাচ ভাঙচুর করেন। ইটপাটকেলের আঘাতে দু-তিনজন শিক্ষার্থী আহত হন। এঁদের মধ্যে মাথায় আঘাত পাওয়া এক শিক্ষার্থীকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর মাথায় সেলাই দেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

চানগাঁও মোল্লা মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহরিয়ার সুমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আকরান এলাকার লোকজনের সঙ্গে কয়েক দিন ধরে সমস্যা চলছিল। আমাদের সঙ্গে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু দু-তিন দিন ধরে শিক্ষার্থীরা আমাদের দোকানগুলো বন্ধ করে দিচ্ছেন। গতকাল তাঁরাই আবার খুলতে বলেন। আবার বন্ধ করতে বলেন। আমরা দোকান বন্ধ করি। সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে শিক্ষার্থীরা মার্কেটের ৭০টি দোকান ভাঙচুর করে লুটপাট করেন। দোকানে আগুন দেওয়ায় তিন থেকে চারটি দোকান পুড়ে গেছে।’

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এজাজ উর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দু-তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবে তাঁদের আঘাত গুরুতর নয়। তাঁদের সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এখন (রাত ১১টা) পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত করে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।