যশোর জেনারেল হাসপাতালে ওষুধসংকট, কষ্টে রোগীরা

যশোর জেনারেল হাসপাতালের ফার্মেসির সামনে রোগীদের ভিড়ছবি: প্রথম আলো

তিন জলাতঙ্ক রোগী যশোর জেনারেল হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের বেঞ্চে বসে আছেন। এমন আরেকজন রোগী এলেই দোকান থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক (টিকা) ওষুধ কেনা হবে। কারণ, এক ভায়াল (বোতল) ওষুধ চারজনের শরীরে প্রয়োগ করা হবে।

এই হাসপাতালে জলাতঙ্ক রোগের টিকা সরবরাহ ৩৫ দিন ধরে বন্ধ থাকায় বাইরের দোকান থেকে এনে টিকা দিতে হচ্ছে। এতে কুকুর-বিড়ালে কামড়ানো অন্তত ১০০ মানুষ প্রতিদিন এই হাসপাতালে টিকা দিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

জলাতঙ্ক রোগের টিকাসহ এই হাসপাতালে অতিপ্রয়োজনীয় ২৭টি ওষুধের মধ্যে ১৫টিরই সরবরাহ নেই। এতে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। ওষুধ না থাকার নিম্ন আয়ের মানুষের সমস্যা বেশি হচ্ছে। কারণ, টাকা না থাকায় বাইরে থেকে তাঁরা ওষুধ কিনতে পারছেন না। এতে তাঁরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে গত এক থেকে দেড় মাস ধরে বেশি চাহিদার প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কর্ডন, জলাতঙ্কের টিকা এআরভিসহ গুরুত্বপূর্ণ ১৫ ধরনের ওষুধ নেই।

জলাতঙ্ক রোগের টিকার সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের সম্প্রসারিত টিকাদান কেন্দ্রের (ইপিআই) মেডিকেল টেকনিশিয়ান (এমটি) নূরুল হক বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে জলাতঙ্ক রোগের টিকা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যে কারণে কুকুর-বিড়ালে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা চারজন হলে তাঁদের একসঙ্গে একটি করে টিকা কিনতে পাঠানো হচ্ছে। টিকার এক ভায়েলে চারজনকে দেওয়া হয়। দৈনিক অন্তত ১০০ জনের মতো রোগী জলাতঙ্ক রোগের টিকা দিতে আসেন।

জলাতঙ্কের টিকা নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা যশোর সদর উপজেলার ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘কুকুর কামড় দিয়েছে। তিন দফায় টিকা নিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই দফায় নিয়েছি। আজ শেষ দফায় টিকা দেওয়ার জন্য বসে আছি। আমরা তিনজন একসঙ্গে হয়েছি। আরেকজনের অপেক্ষায় আছি। প্রতিবার ১৩৫ টাকা করে খরচ হচ্ছে। হাসপাতালে টিকা সরবরাহ থাকলে আমাদের এই কষ্ট হতো না।’

জলাতঙ্ক রোগের টিকা সরবরাহ বন্ধ কেন, জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘দুই মাস আগে সরকার ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডকে টিকা সরবরাহের কার্যাদেশ দিয়েছে। কিন্তু ওই কোম্পানি টিকা সরবরাহ করতে গড়িমসি করছে। আমরা ওই কেম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। কিন্তু আজ না কাল, কাল না, পরশু দিবে বলে আমাদের ঘোরাচ্ছে।’

গত ৩১ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ফার্মেসি থেকে রোগীদের ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।

অন্তত ১০ রোগীর ব্যবস্থাপত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেল, চিকিৎসক প্রত্যেকের ব্যবস্থাপত্রে চার থেকে ছয় ধরনের ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্য এক–দুটি করে ওষুধ ফার্মেসি থেকে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। যেসব ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে ক্যালসিয়াম, গ্যাস ও শ্বাসকষ্টের ওষুধই বেশি দিতে দেখা গেল। ব্যবস্থাপত্রে লেখা অন্য ওষুধগুলো বাইরের দোকান থেকে কিনে নিতে রোগীদের বলা হচ্ছে।

যশোর সদর উপজেলার চূড়ামনকাঠি গ্রাম থেকে এসেছেন সত্তরোর্ধ্ব আমজাদ হোসেন। হাসপাাতালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ নেওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এই শীতে শ্বাসকষ্টে ভুগছি। হাসপাতালের ডাক্তার দেখে স্লিপে চারটি ওষুধ লিখে দিছেন। কিন্তু একটা ওষুধ পালাম। সব ওষুধ হাসপাতাল থেকে দিলি খুব ভালো হতো।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ফার্মেসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানুয়ারি মাসে ২৭ ধরনের ওষুধের চাহিদাপত্র দেন। এর মধ্যে ৮ জানুয়ারি ১২ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৫ ধরনের ওষুধ হাসপাতালে সরবরাহ নেই।