‘এ্যালা কায় দিবে কোরবানি, কায় খাইবে দাওয়াত’

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রংপুরের তারাগঞ্জের মেহেরুল ইসলামের লাশ হাইওয়ে থানা থেকে নিতে এসে মূর্ছা যান বড় ভাই বাবুল ইসলাম। স্বজনেরা তাঁর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছিলেনছবি: প্রথম আলো

‘ভাই তুই যে কলু এবার কোরবানিত গরুর ভাগ দিমো। ঈদের ছুটিত আসি সাগায়িক দাওয়াত দিয়া খাওয়ামো। এ্যালা কায় দিবে কোরবানি, কায় খাইবে দাওয়াত? তুই কেন হামাক ছাড়ি গেলু?’ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ভাই মেহেরুল ইসলামের লাশ নিতে এসে তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানায় এভাবে বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যান বাবলু মিয়া।

সাপ্তাহিক ছুটিতে বাড়িতে এসে বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে কোরবানি নিয়ে পরামর্শ করেছিলেন আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য মেহেরুল ইসলাম। ছুটি শেষ হওয়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আজ শনিবার ফিরছিলেন কর্মস্থলে। কিন্তু পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় তাঁর।

মেহেরুল ইসলাম তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের আসামীগঞ্জ ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে আনসার সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরিবারে তাঁর স্ত্রী ও দুই বছরের এক ছেলেসন্তান আছে।

তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে গঙ্গাচড়া উপজেলার দক্ষিণ খলেয়া মাঝাপাড়া এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মিনিবাসের সংঘর্ষে মেহেরুল ইসলামসহ তিনজন প্রাণ হারান। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। নিহত সবাই অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন। তাঁরা পাগলাপীর বাজার থেকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় যাচ্ছিলেন।

নিহত অন্য দুজন হলেন কিশোরগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও গাড়াগ্রাম গণেশের বাজার এলাকার বাসিন্দা দিবা রানী সরকার (৪০)। দিবা রানী সরকার রংপুর নগরীর কেরানীপাড়ায় ভাড়া বাসায় স্বামী–সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। সকালে তিনি রংপুর থেকে বাসে করে পাগলাপীরে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে কিশোরগঞ্জে যাচ্ছিলেন। তাঁর স্বামী শিব শংকরও পেশায় শিক্ষকতা করেন।

এ ছাড়া ওই সিএনজিতে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী রিমু আক্তার (২২) নিহত হন। রিমু আক্তারের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পুটিমারী ইউনিয়নের ভেরভেরী গ্রামে। রিমু আক্তার ও দিবা রানী সরকারকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁরা মারা যায়। মেহেরুল ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা চত্বরে দিবা রানী সরকারের ভাই বিদ্যালয়শিক্ষক ভরত চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কগুলো একটুও নিরাপদ নয়। অকালে বাসচাপা পড়ে আমার বোন মারা গেছে। তাঁর ছোট দুটি বাচ্চা এখন এতিম। মায়ের জন্য হাসপাতালের মর্গে ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে। আমার বোনের মতো কেউ যেন আর অকালে প্রাণ না হারায়।’

তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম বলেন, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বাস উদ্ধার করা হয়েছে। একজন প্রভাষক, একজন বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী ও একজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।