উঠানে যুবকের হাত-পা ভাঙা লাশ ফেলে রেখে রান্না করছিলেন চাচাতো বোন
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পরকীয়ার জেরে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে এক যুবককে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কুমারখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জালাল মোড় এলাকায় আজ বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহত যুবকের নাম স্বপন আলী (২৭)। তিনি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে। কুমারখালীর যে বাড়িতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, ওই বাড়িতে স্বপনের চাচাতো বোনের বিয়ে হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বাড়িতে দেখা যায়, পুলিশ লাশের সুরতহাল করছে। উৎসুক লোকজন ভিড় করেছেন। ওই বাড়িসহ আশপাশের বাড়িগুলোতে কোনো লোকজন নেই। লাশের পাশে রান্নাঘরের চুলায় খিচুড়ি চড়ানো। চুলার পাশে ডিম ও লালশাক রয়েছে। সড়কের পাশে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহত স্বপনের বাবা আবদুর রশিদ।
আবদুর রশিদ আহাজারি করে জানান, তাঁর ভাতিজির সঙ্গে তাঁর ছেলে স্বপনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ভাতিজি তাঁর ছেলেকে ফোন করে শ্বশুরবাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন এবং বাড়ির লোকজন পিটিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়েছেন। তিনি থানায় হত্যা মামলা করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে স্বপনের চাচাতো বোনের একটি ভিডিও বক্তব্য পাওয়া গেছে। তাঁর ভাষ্য, স্বপন তাঁকে পছন্দ করতেন। এ নিয়ে অতীতে অনেকবার সালিস হয়েছে।
হত্যার ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী কামালের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মারধরের খবর শুনে সকাল আনুমানিক আটটার গিয়ে দেখি অনেক লোকজন। উঠানে শুয়ে পড়ে ওই ছেলে বারবার বাড়ির বউয়ের নাম ধরে (স্বপনের চাচাতো বোন) ডেকে বলছে, “আমার পানি দে রে, আমার হাসপাতালে নিয়ে যা, আমি বাঁচে যাবনে।” ঘণ্টাখানেক পরে গিয়ে দেখি মারা গেছে, বাড়ির বউটি রান্না করছে।’
স্থানীয় কালু শেখ বলেন, তিনি রাতে ওই বাড়িতে বাঁশ দিয়ে মারধরের শব্দ ও চিৎকার–চেঁচামেচি শুনেছেন। আজ সকালে এসে তিনি একজনের লাশ দেখতে পান।
এ বিষয়ে স্বপনের চাচাতো বোনের একটি ভিডিও বক্তব্য পাওয়া গেছে। ভিডিওতে তিনি বলেন, রাত দুইটার দিকে স্বপন তাঁর শ্বশুরবাড়িতে এসে জানালা ধরে টানাটানি করছিলেন। সে সময় তাঁর ভাশুরসহ স্থানীয় লোকজন তাঁকে মারধর করে উঠানে ফেলে রেখে যান। তিনি সকালে স্বপনের বাড়িতে খবর দিয়ে রান্না করছিলেন। তাঁর ভাষ্য, স্বপন তাঁকে পছন্দ করতেন। এ নিয়ে অতীতে অনেকবার সালিস হয়েছে।
কুমারখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. তুহিন শেখ বলেন, ওই ছেলে তিন-চার মাস আগেও একবার ওই বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি সালিস করেছিলেন। গত রাতে আবারও এলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে জানিয়েছিলেন। সে সময় তিনি ওই যুবককে মারধর করতে নিষেধ করে ৯৯৯ নম্বরে (জাতীয় জরুরি সেবা) কল করতে বলেছিলেন।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে জালাল মোড় এলাকার একটি বাড়ির উঠান থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত যুবকের মাথার চুল এবড়োখেবড়ো করে কাটা, শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত রয়েছে। ওসি বলেন, চাচাতো বোনের সঙ্গে পরকীয়ার জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। উঠানে লাশ ফেলে রেখে ওই বাড়ির সবাই পালিয়েছেন। থানায় হত্যা মামলা নেওয়া হবে।