আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী হামলার মামলায় অভিযুক্ত তিনজনই বেকসুর খালাস

রায় ঘোষণার সময় তিনজনই আদালতে উপস্থিত ছিলেন
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে হওয়া মামলায় অভিযুক্ত তিনজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ নূরুল আমীন বিপ্লব এ রায় ঘোষণা করেন।

খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন—বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীর তিন জেএমবি সদস্য জহুরুল হক ওরফে জসিম (২৯), মো. হাসান (২৮) ও জহরুল হকের স্ত্রী মোছা. আর্জিনা ওরফে রাজিয়া সুলতানা (২১)। রায় ঘোষণার সময় তিনজনই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী আদালতের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি মুমিনুর রহমান। তিনি রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে বলেন, ‘আতিয়া মহল-২’-এ আত্মঘাতি হামলায় চারজন নিহত হয়েছিলেন। তবে ওই মামলায় অভিযুক্ত তিনজন আসামি ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। কারণ, তাঁরা এ ঘটনার পূর্বেই অন্য মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।

আদালত সূত্র জানায়, মামলার পর্যবেক্ষণে আদালতের বিচারক উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত তিন আসামি সিলেটের আতিয়া মহলে হামলার ঘটনার আগে থেকে কারাগারে ছিলেন। এর আগেই তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একাধিক মামলা হয়েছিল। পরে চট্টগ্রামের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে তাঁদের বিচারের জন্য সোপর্দ করা হয়। পূর্বোক্ত মামলার সূত্র ধরে আসামিদের আতিয়া মহলের মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একই ধারায় বিচার কিংবা দণ্ড প্রদান করা আইনসংগত নয়। এক অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারিতে সোপর্দ ও দণ্ডিত করা যাবে না। আসামিদের বিরুদ্ধে যেহেতু চট্টগ্রামে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একই ধারায় মামলা আছে, সেহেতু ওই ধারায় বর্ণিত অপরাধের বিচার চট্টগ্রামের ট্রাইব্যুনালে হওয়া সমীচীন। সেটা না হলে আসামিদের ক্ষেত্রে বিচারে বিভ্রাট ঘটার সমূহ সম্ভাবনা থাকে বলে আদালত বলেন।

আদালতের নিয়োগ করা আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শাহ্ আলম বলেন, অভিযুক্ত তিনজন খালাস পাওয়ায় মামলায় ন্যায়বিচার পাওয়া গেছে। এতে তিনি ও তাঁর মক্কেলরা খুশি।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ রাতে আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। অভিযানে র‍্যাব, পুলিশ, পুলিশের বিশেষ ক্রাইম রেসপন্স টিম (সিআরটি), সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল অংশ নিয়েছিল। সেনাবাহিনীর পরিচালিত ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শেষে ভবনের ভেতর থেকে এক নারীসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

অপারেশন শেষ হওয়ার আগে অভিযান চলাকালে আতিয়া মহল থেকে কিছু দূরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে র‍্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের তৎকালীন প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, দুই পুলিশ সদস্যসহ সাতজন নিহত হয়েছিলেন।

আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শেষে তিনটি মামলা হয়ছিল। মামলার প্রথম দিকে পুলিশ তদন্ত করলেও পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তভার নেয়। ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পিবিআই। অভিযোগপত্রে তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।

পরে ওই বছরই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পৃথক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে জহুরুল ও তাঁর স্ত্রী আর্জিনা এবং কুমিল্লার চান্দিনা থেকে মো. হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তাঁদের আতিয়া মহলের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

অন্যদিকে বোমা বিস্ফোরণ ও হত্যার ঘটনায় হওয়া দুটি মামলায় ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। প্রতিবেদনে মামলা নিষ্পত্তির আবেদন করা হয়েছিল।