সমস্যা সমাধানে নদীতে অবাধ জোয়ার–ভাটার ব্যবস্থার (টিআরএম) কোনো বিকল্প নেই। সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে ভবদহের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এতে সরকারের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।
ইকবাল কবির জাহিদ, উপদেষ্টা, ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি

যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। এ কারণে নদী দিয়ে এই এলাকার পানি নামছে না। এ অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হয়। বিল উপচে পানি ঢোকে বিলসংলগ্ন গ্রামগুলোতে। প্রতিবছর বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার বিলসংলগ্ন গ্রামগুলো প্লাবিত হয়। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন এলাকার প্রায় তিন লাখ মানুষ।

ভবদহ অঞ্চলে অন্তত ৫২টি ছোট–বড় বিল আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম বোকড়, খুকশিয়া, কেদারিয়া, কপালিয়া, ডুমুর, পায়রা ‍ও দামুখালীর বিল। ১৩ মার্চ বিলগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ বিলের ওপরের অংশে ধান হচ্ছে। তবে বিলের নিচের দিকে শুধু পানি আর পানি। বিল–সংলগ্ন মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী শুকিয়ে সরু খালের মতো হয়ে গেছে।

অভয়নগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে শ্রী নদীর ওপর ভবদহ স্লুইসগেট অবস্থিত। ভবদহ ২১-ভেন্ট (কপাট) স্লুইসগেটের ওপর ১৪টি সেচযন্ত্র দিয়ে এক পাশের নদী থেকে পানি সেচে পাইপের মাধ্যমে নদীর অপর পাশে ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টি ছোট এবং চারটি বড় সেচযন্ত্র। প্রায় ২০০ মিটার দূরে শ্রী নদীর অপর শাখার ওপর ৯-ভেন্ট স্লুইসগেট। স্লুইসগেটের ওপর ছোট পাঁচটি বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র বসানো রয়েছে। সেচযন্ত্র দিয়ে এক পাশের নদী থেকে পানি সেচে পাইপের মাধ্যমে নদীর অপর পাশে ফেলা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ভবদহে ২০টি পাম্পসেট (সেচযন্ত্র) দিয়ে সেচ চলছে। প্রতিটি সেচযন্ত্রের ক্ষমতা ৫ কিউসেক। গত জানুয়ারি থেকে ৩৫ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন আরও চারটি পাম্পসেট বসিয়ে সেচ দেওয়া হচ্ছে। সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচ সফল হয়েছে। এতে এলাকার বেশির ভাগ বিল থেকে পানি নেমে গেছে। ওইসব বিলে এবার গত বছরের চেয়ে প্রায় চার হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে বলে দাবি তাওহীদুলের।

যশোরে গত কয়েক বছরের তুলনায় গত বছর অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। এরপরও ওই এলাকার বিলগুলোতে জলাবদ্ধতা দূর হয়নি। ফলে অনেক জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব হয়নি। অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলা তিনটির ভবদহ অঞ্চলে ২৬ হাজার ২৮ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়। জলাবদ্ধতার কারণে ওই অংশে এবার ৪ হাজার ৮০১ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়নি। এর মধ্যে মনিরামপুর উপজেলায় ২ হাজার ৯২৬ হেক্টর, কেশবপুর উপজেলায় ১ হাজার ৩৫ হেক্টর এবং অভয়নগর উপজেলায় ৮৪০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়নি।

ভবদহ অঞ্চলের নদীগুলোর অবস্থা ভয়াবহ বলে জানান ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। তিনি বলেন, এলাকার প্রায় সব বিলে এখনো অনেক পানি রয়েছে। বেশির ভাগ বিলে এবার বোরো ধানের চাষ হয়নি। সমস্যা সমাধানে নদীতে অবাধ জোয়ার–ভাটার ব্যবস্থার (টিআরএম) কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু টিআরএম না করে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে ভবদহ জলাবদ্ধতার সমাধান করতে চায়। সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে ভবদহের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এতে সরকারের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না। ভবদহ সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না।